শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

রেশনবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত ৬০ হাজার পুলিশ

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হচ্ছে না

আলী আজম

অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই আজীবন শতভাগ রেশন সুবিধার দাবি তুলে আসছিলেন। পুলিশ সপ্তাহের একাধিক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁরা এ দাবি তুলে ধরেন। সে দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও অবসরে যাওয়া ৬০ হাজার পুলিশ সদস্য এখনো রেশনবঞ্চিত। তবে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে যারা অবসরে গেছেন তাদের ক্ষেত্রে রেশনসুবিধা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারির ওই প্রজ্ঞাপনের ফলে রেশন-সুবিধা-বঞ্চিত হন ২০২০ সালের আগে অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা। মূলত যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি তুলেছিলেন তাঁরাই রেশনসুবিধার বাইরে চলে যান। ফলে শতভাগ রেশনসুবিধা পাওয়ার দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা। বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের ব্যানারে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়ে রেশনসুবিধা দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং দেখা করতে চান। কিন্তু তাঁদের অনুরোধে কেউ সাড়া দেননি। এমন বাস্তবতায় রেশনবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের দুটি সংগঠন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি ও অনূর্ধ্ব সাব-ইন্সপেক্টর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা অবসরকালীন রেশনসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। তাই বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে যারা অবসরে গেছেন তাদের ক্ষেত্রে রেশনসুবিধা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ

চলতি বছর পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশে শতভাগ রেশন চালু করা এবং অবসরপ্রাপ্ত সব পুলিশ সদস্যের আজীবন রেশন প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে রেশনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। পুলিশ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ২০২০ সালের পরে অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্য রেশন পাচ্ছেন। তবে ২০২০ সালের আগে অবসরে যাওয়া পুলিশের ৬০ হাজার সদস্য রেশনবঞ্চিত হচ্ছেন। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে শুরু করে আইজিপি পর্যন্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ১ জানুয়ারি, ২০২০-এর আগে অবসর গ্রহণকারী জীবিত পুলিশ সদস্যদের মানবিক ও অবস্থানগত দিক বিবেচনা করে আজীবন দুই সদস্যের রেশনসুবিধা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। অনূর্ধ্ব সাব-ইন্সপেক্টর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত বছরের ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়, চাকরিকালে আমরা সবাই নামমাত্র বেতন পেয়ে অতিকষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনজীবিকা নির্বাহ করেছি। অবসরে এসেও সেই দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। অনূর্ধ্ব সাব-ইন্সপেক্টর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. আনিসুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে আমরা কম বেতনে চাকরি করেছি। কম দামের রেশন পেয়েছি। পেনশনও কম পেয়েছি। এজন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে সুযোগসুবিধার দাবি করছি। এবারের পুলিশ সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেখা করেন। সেখানে আমাদের রেশনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপর আর কোনো আপডেড জানি না।’

তিনি বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয় না। কেবল আউটডোরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ওষুধও দেওয়া হচ্ছে না। এসব ওষুধ শুধু পুলিশে কর্মরতদের দেওয়া হচ্ছে। আমরা যারা অবসরে এসেছি তাদের পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার সব ধরনের সুযোগসুবিধার প্রত্যাশা করছি।’ পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড পেনশন) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালের আগে অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের আজীবন রেশনসুবিধার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’

সর্বশেষ খবর