রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

গ্যাস সংকট মোচনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন ব্যবসায়ীরা

শাহেদ আলী ইরশাদ

গ্যাস সংকট মোচনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন ব্যবসায়ীরা

►  বন্ধ অনেক কারখানা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যন্ত্রপাতি  ►  বিনিময় হারের ক্ষতিতে ব্যাংকের দায় বেড়েছে ৪০ শতাংশ  ► ঋণ পরিশোধে ১৫ বছর সময় দাবি

 

বেশির ভাগ শিল্পোদ্যোক্তা তাদের শিল্পকারখানা চালু রাখতে পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছেন না। অনেকেই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন অথবা উৎপাদন অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন। আমদানির জন্য ৮০ টাকায় এলসি খোলা ডলার ১১৫ টাকা হওয়ায় বেড়েছে ব্যাংকের দায়। এসব সমস্যা সম্পর্কে জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বিটিএমএর গুলশান কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা সরকারকে গ্যাসের শুল্ক আগের স্তরে ফিরিয়ে আনার এবং এ খাতটিকে টিকে থাকতে সহায়তা করার জন্য ডলার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধান করার আহ্বান জানাবেন। গত বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। তারা ডলার সম্পর্কিত সংকট মোকাবিলা করা এবং ব্যবসায়ীদের কাস্টমসের হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাতে চান সরকারের কাছে।

এ বিষয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও সার্ক চেম্বারের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা প্রথমে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে দেখা করবেন। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, আমরা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একটি বৈঠক করেছি। গ্যাস সরবরাহ সমস্যার কারণে আমরা একটি গুরুতর সংকটের সম্মুখীন। আমাদের সদস্য মিল এবং সিমেন্ট ও ইস্পাত উৎপাদন খাতসহ অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি।

জানা গেছে, বৈঠকে ডলার সংকট ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। কারণ ডলারের বিনিময় হারের ব্যবধানের কারণে আমাদের মূলধন কমে যাচ্ছে। আমরা কাঁচামাল কিনতে পারছি না। এসব কারণ ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জরুরি প্রয়োজন হিসেবে ব্যবসায়ীরা এসব সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। এ ছাড়াও বৈঠকে কাস্টমস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি অসুবিধার কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। অনেকের ব্যবসা চালু না থাকলেও বেশি রাজস্ব আদায়ের নামে চাহিদা নোটিস দিয়ে ব্যবসায়িক হয়রানি করা হচ্ছে বলেও জানানো হয় বৈঠকে। তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে টেক্সটাইল মিলগুলোর যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে প্রয়োজনীয় সুতা ও কাপড় সরবরাহ করতে পারছে না। বয়লার চালাতে না পারায় কাপড় প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট বন্ধ রয়েছে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। তারা বলেন, দাম বৃদ্ধির পর পেট্রোবাংলা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিলেও এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

 

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, আমরা এফবিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে দেখা করে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করছি। আলোচনার সময়, টেক্সটাইল মিল মালিকরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রস্তাব করেছেন। এজন্য সিএনজিচালিত গাড়ি এলপিজিতে রূপান্তরিত করা এবং বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে এলপিজি ব্যবহারের প্রস্তাব করেন। তারা আরও বলেছেন, উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানাগুলো ডলারের বিনিময় হারের ক্ষতির কারণে ৪০ শতাংশ মূলধন হারিয়েছে। এ ছাড়াও গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের মূলধনের অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ অর্থ প্রয়োজন। ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডের সঙ্গে সমান কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় প্রয়োজন তাদের। স্বল্পমেয়াদি ঋণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর এবং ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত মূলধন বরাদ্দ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসায়ীরা আমার সঙ্গে দেখা করে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা সেই প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি। ঋণের কিস্তি পরিশোধ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর