সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
বগুড়া জেলা শহর

হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়

► তিন যুগে ১৩৭ পুকুর ভরাট ► অগ্নিকান্ডের সময় মিলছে না পানি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়

বগুড়া জেলা শহরে ছোট-বড় মিলে পুকুর ছিল ১৩৭টি। ২০১৬ সালের তালিকায় সেই সংখ্যা নেমে আসে ১২-তে। সবশেষ ২০২০ সালের তালিকায় যে কটি পুকুর ছিল, বর্তমানে সেগুলোও নেই। ফলে তিন যুগে জেলা শহরটির ১৩৭টি পুকুর ক্রমে ক্রমে ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তীব্র গরমে শহরে কিশোর-যুবকরা জলকেলি করার জায়গা পাচ্ছে না। পরিবেশ হারিয়েছে ভারসাম্য। অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনার সময় মিলছে না পানি। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত পাঁচ বছরে জেলা শহরের নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকান্ডে ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকা।

জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বগুড়া জেলা শহর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে জায়গার তুলনায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেশি। বহুতল ভবনও অনেক। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। দেড় যুগ আগে পানির রিজার্ভার ট্যাঙ্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেছিল; কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, বগুড়ায় কয়েকটি বড় মার্কেট আছে। এগুলোয় আগুন লাগলে কাছাকাছি পুকুর বা জলাশয় না থাকায় পানির ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালে কয়েকটি অগ্নিকান্ডে প্রায় ৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। পানির ব্যবস্থা না থাকায় গত পাঁচ বছরে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকান্ডে ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকার মতো। শহরের ফল মার্কেটে আগুন লেগে প্রায় ১১টি দোকান পুড়ে যায়। সে সময় শহরে ১০০টি পানির রিজার্ভার তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। এর তিনটি নিউমার্কেটের ডান পাশে ও বড়গোলা, জলেশ্বরীতলা, নবাববাড়ি রোড, চেলোপাড়া সেউজগাড়ি, ঝাউতলা ও গোহাইল রোডে একটি করে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর পানির ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মঞ্জিল হক জানান, শহরের নিউমার্কেট এলাকায় পানির ব্যবস্থা সবচেয়ে জরুরি।

শহরের প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেটের একটি অংশের নাম পুকুরপাড় নিউমার্কেট। এখানে বর্তমানে কোনো পুকুর নেই। যে পুকুরকে কেন্দ্র করে এলাকার নামকরণ হয়েছিল, সেটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ হয়েছে প্রায় তিন যুগ আগে। ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় শহরের কলোনি এলাকায় তিনটি পুকুরের কথা উল্লেখ আছে; বাস্তবে সেগুলোর অস্তিত্ব নেই। রেলওয়ের যেসব পুকুর বা জলাশয় ছিল তাও দখল ও লিজের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

শহরের মাতলতিনগর এলাকায় মাটির মসজিদ সড়কে (মজুমদার পাড়া) বিশালাকায় পুকুর ছিল। গত এক দশকের মধ্যে ওই পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। বকশিবাজারে রাস্তার ধারে সিদ্দিক মিয়ার পুকুর, ইয়াকুবিয়া স্কুলের পূর্বে ছিল গভীর খাদ পুকুর। স্টেডিয়াম পুকুর, বাদুরতলায় বড়ালের পুকুর, সেউজগাড়িতে রমেশ পালের পুকুর, ময়েজ মিয়ার পুকুর, রহমান নগরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস চত্বরের পুকুর এবং ময়েজ মিয়ার বাগানের পুকুরও ভরাট করা হয়েছে।

বগুড়া শহরের কামারগাড়িতে রেলওয়ে বিভাগের জোড়া পুকুরের মধ্যে দক্ষিণ ধারের পুকুর ভরাট করে মার্কেট করা হয়েছে। সূত্রাপুরে সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠের পুকুর, শহীদ নগরের পশারী পুকুর, কালিতলা এবং শিববাটি এলাকার একাধিক পুকুর গত একদশকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে পৌর এডওয়ার্ড পার্কে পুকুর থাকলেও পুকুরের পানি তলানিতে। সরকারি আজিজুল হক কলেজ নতুন ভবন ও শিল্পকলা একাডেমির সামনে পুকুর রয়েছে। তবে এই গরমে পানি কমে গেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পুকুর ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রিও করা হচ্ছে।

পুকুরের মালিকরা বলছেন, টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করা হচ্ছে। শহরের কামারগাড়ী এলাকায় জোড়া পুকুরের একটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। আরেকটিও আংশিক ভরাট করা হয়েছে। শহরের সাতানি মসজিদের পূর্ব পাশে বড় পুকুর রয়েছে; কিন্তু পুকুরটি সংস্কার না করায় সেখানে কেউ গোসল করতে যান না।

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, অগ্নিকান্ডে জানমালের ক্ষতি কমাতে যে পানির প্রয়োজন তা জোগান দিতে পারবে করতোয়া নদী। তাই করতোয়া খননকাজ শুরু হয়েছে। শহরে নতুন করে রিজার্ভার তৈরি ও হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর