শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সিলেট

দলের ঠিকানা নেতাদের ড্রয়িং রুম

নেতৃত্ব বদল হলে বদলে যায় ঠিকানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে প্রায় সারা বছরই সরগরম থাকে সিলেটের রাজপথ। রাজনীতি নিয়ে নেতারা ব্যস্ত থাকলেও বড় দলগুলোর কোনোটিই সিলেটে করতে পারেনি স্থায়ী কার্যালয়। কখনো নেতাদের ড্রয়িং রুম কিংবা ব্যক্তিগত অফিস, আবার কখনো হোটেলের হলরুম ভাড়া করে চালাতে হচ্ছে দলগুলোর কার্যক্রম। নেতাদের ড্রয়িং রুমকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলায় নেতা-কর্মীরাও হয়ে পড়ছেন বিভক্ত। এতে বাড়ছে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সিলেটের শীর্ষ নেতারা স্বীকার করেন কার্যালয়ের অভাবে দলীয় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো তারা দলের স্থায়ী কার্যালয় করতে পারেননি। তবে অচিরেই দলের স্থায়ী কার্যালয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন দলের জেলা ও মহানগর শাখার নেতারা। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের দমন-পীড়ন নীতির কারণে তারা কার্যালয় করতে পারছেন না। দেশ স্বাধীনের পর কেটে গেছে প্রায় ৫৩ বছর। কিন্তু এখনো সিলেটে স্থায়ী কার্যালয় করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দলীয় সভার ভেন্যুর জন্য বেছে নিতে হচ্ছে হোটেল কিংবা জেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের তালতলাস্থ ব্যক্তিগত কার্যালয়ই সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই দলীয় নেতা-কর্মী সেখানে ভিড় করেন। এর আগে জেলার সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর টিলাগড়ের বাসায়ও নেতা-কর্মীরা ভিড় করতেন। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতি শুক্র ও শনিবার তিনি সিলেটে অবস্থান করেন, তাই সেখানেও নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগে থাকে। এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের বাসায়ও একইভাবে নেতা-কর্মীদের ভিড় জমে প্রতি সন্ধ্যায়। দলীয় কার্যালয় না থাকায় নেতা-কর্মীরা বাধ্য হয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের বাসায় ভিড় করতে হচ্ছে।

এদিকে, দলীয় কার্যালয়ের অভাবে মহানগর আওয়ামী লীগকে তালতলাস্থ গুলশান সেন্টার কিংবা মির্জাজাঙ্গালে হোটেল নির্ভানা ইন-এর হলরুম ভাড়া করে দলীয় সভা করতে হয়। কখনো কখনো রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির হলরুমও ব্যবহার করে থাকেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ সভা-সেমিনার আয়োজন করা হয় জেলা পরিষদ হলরুমে।

এদিকে, ২০১৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের কারণ হিসেবে কেন্দ্র থেকে যে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা ও দলীয় কার্যালয় না থাকা। এরপর কেন্দ্রের চাপে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নগরীর চালিবন্দরে ইব্রাহিম স্মৃতি সংসদে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ভবনের একটি ফ্লোরে ওই স্মৃতি সংসদ করেছিলেন কামরানপুত্র আরমান আহমদ শিপলু। উদ্বোধনের পর হাতেগোনা কয়েকটি দলীয় কর্মসূচি পালিত হয় ওই কার্যালয়ে। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন এলে অস্থায়ী কার্যালয়টিও অকার্যকর হয়ে পড়ে। দলীয় কার্যালয় প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় না থাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন নেতার বাসায় ধরনা দিতে হয়। এতে দলের কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। কার্যালয় থাকলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব কমত ও ঐক্য আরও শক্তিশালী হতো। একটি কার্যালয় করার জন্য অনেকদিন ধরে চেষ্টা চলছে। আশা করি অচিরেই একটি স্থায়ী কার্যালয় হবে।’

আওয়ামী লীগের মতো একই অবস্থা বিএনপিরও। জেলা বিএনপির কার্যালয়ের কোনো সাইন বোর্ড নেই দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে কমিউনিটি সেন্টার ও হোটেলের হলরুম ব্যবহার করে চলছে দলটির কার্যক্রম। দলীয় কাজে জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাসা, ব্যক্তিগত অফিস, চেম্বার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হচ্ছে            কার্যালয় হিসেবে। এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের রাজপথে দাঁড়াতে দিতেই চায় না। এ অবস্থায় কার্যালয় নিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালানো প্রায় অসম্ভব। তাই নেতৃবৃন্দের বাসা, চেম্বার ও সেন্টার ভাড়া করে দলীয় কার্যক্রম চালাতে হয়।

এতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে।

তবে বড় দল দুটির কার্যালয় না থাকলেও সিলেট মহানগরীতে রয়েছে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর। জাতীয় পার্টির কার্যালয় খুব কমই খোলা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা শাখার সদস্য সচিব সাইফুদ্দিন আহমদ খালেদ। আর বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টির মতো ছোট দলগুলোরও রয়েছে অস্থায়ী কার্যালয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর