বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

হজ কার্যক্রম উদ্বোধন

মুসলিম ঐক্য কমাতে পারে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সব মুসলিম দেশ একসঙ্গে কাজ করলে ফিলিস্তিনিদের দুঃখকষ্ট লাঘবসহ মুসলিমদের জন্য আরও ভালো অবস্থানে পৌঁছানো সহজ হতো। আজকে যদি আমাদের সব মুসলিম দেশ এক হয়ে একযোগে কাজ করতে পারতাম, তাহলে আমরা এ বিষয়ে আরও অগ্রগামী হতে পারতাম।

গতকাল রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন আশকোনা হজক্যাম্পে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘হজ কার্যক্রম ২০২৪’-এর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হুছামুদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান, হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বক্তৃতা করেন। দুজন হজযাত্রী অনুষ্ঠানে নিজস্ব অভিব্যক্তিও ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০২৪ সালের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত হয় এবং শেষে দেশ-জাতি ও হজযাত্রীদের সার্বিক মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ বছর মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ বাংলাদেশি হজ পালন করতে পারবেন। তার মধ্যে ৪ হাজার ৫৬২ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকিরা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন। আজ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের নিয়ে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট বিজি-৩৩০১ বিমানটি ৪১৯ যাত্রী নিয়ে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে যাত্রা করবে। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একমাত্র বোন (সরকারপ্রধান) হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার এখানে একটাই কথা-সবাই এক হোন এবং এ ধরনের অন্যায়-অবিচার যেন আমাদের ওপর না হয়, সেজন্য সবাই লক্ষ্য রাখবেন। আন্তর্জাতিক যে ফোরামে কথা বলেছেন সেখানেই ফিলিস্তিনিদের জন্য তাঁর কণ্ঠ ‘সোচ্চার ছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। কারণ ফিলিস্তিনিরা আরব ভূখন্ডে তাদের জায়গা তারা পাবে, এটা তাদের অধিকার। এ অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। কাজেই সে অধিকার তাদের দিতে হবে। ১৯৭৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে জাতির পিতার ভাষণেরও উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বলেছেন, ‘আরব ভাইদের ওপর যে নিদারুণ অবিচার হয়েছে। অবশ্যই তার অবসান ঘটাতে হবে। অন্যায়ভাবে দখলকৃত আরব ভূমি অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। জেরুজালেমের ওপর আমাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই জেরুজালেমে মুসলমানদের যে অধিকার, এটা প্রতিষ্ঠা করার কথাও জাতির পিতাই তাঁর বক্তব্যে বলেন। তিনি বলেন, আপনারা দেখছেন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। সেখানে নারী ও ছোট ছোট শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। কাজেই তাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য ও সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য আপনারা (হজযাত্রী) দোয়া করবেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার হাজিদের জন্য যে সুযোগসুবিধাসংবলিত হজ ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে, সেটা ধরে রেখে যেন আরও উন্নত করতে পারে, সে দোয়াটা আপনারা করবেন আর দেশের মানুষের জন্য দোয়া করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম সব সময় সেটাই বিশ্বাস করে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের সে কথা বলে গেছেন। কাজেই আমরা সেটাই বিশ্বাস করি। অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, এ ধরনের কোনো কাজ যাতে কেউ না করে।

 শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, যে ধর্ম সব শ্রেণির মানুষকে অধিকার দিয়ে গেছে, এই ধর্মের নামে সামান্য মুষ্টিমেয় কিছু লোক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে, এটাই সব থেকে দুঃখজনক। আমি এটারও প্রতিবাদ করি সব সময়।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে হজ ব্যবস্থাপনাটাকে আরও উন্নত করতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা করতে পেরেছি বলেই আপনারা আজকে সবাই ভালোভাবে হজ করতে যেতে পারছেন, এটা আরও সহজ হয়েছে। এ হজ ক্যাম্পটার যথাযথ উন্নতি করে দিয়েছি। এখান থেকে একটি আন্ডারপাস করে দেওয়া হচ্ছে। যেটার মাধ্যমে হজক্যাম্প, বিমানবন্দর এবং রেলস্টেশনের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে। এখানে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে এস্কেলেটর ও গলফ কার্টের মতো গাড়ি থাকবে। তাঁর সরকার সারা দেশে যে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে সেখানে হাজিদের প্রশিক্ষণ, রেজিস্ট্রেশনসহ সেবা প্রদানকারীদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

সার্বিক বিমান পরিবহনের উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৌদি এয়ারলাইনসে যেমন তেমন নিজস্ব বিমানেও আমরা এখন হজযাত্রী আনা-নেওয়া করতে পারি। আজকে আমরা ই-হজ ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি। কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের আগামী দিনের লক্ষ্য হচ্ছে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এরপর আর কোনো কষ্ট করতে হবে না, আপনারা ঘরে বসেই সব ব্যবস্থা পাবেন। সোজা প্লেনে উঠবেন, চলে যাবেন। সে ধরনের ব্যবস্থা আমরা করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মালপত্র নেওয়া বা ওখান থেকে মালপত্র নিয়ে আসা বা জমজমের পানি নিয়ে আসার সব ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। মক্কা-মদিনায় হজ অফিস স্থাপন করাসহ জেদ্দায় আলাদাভাবে টার্মিনালে জায়গা ভাড়া নিয়ে আমাদের হাজিরা যাতে সেখানে গিয়ে অবস্থান করতে পারেন সেই ব্যবস্থাটাও করেছি। আমরা যখন সরকারে এসেছি তখন থেকেই এ ব্যবস্থাটা নিয়েছি এবং প্রতি বছর টার্মিনালে এ ব্যবস্থাটা আমরা রাখি। কারণ আগে যাত্রীদের এখানে সেখানে ফুটপাতে বসে থাকতে হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন এটা ঠিক। কিন্তু পাশাপাশি এ হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ইসলামের সেবা করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার ব্যবস্থা এবং আয়োজনের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়ে যান। তিনি বলেন, ইসলাম সম্পর্কে মানুষের যেন সম্যক ধারণা হয় সে ব্যবস্থাটা তাঁর হাতেই করা। স্বাধীনতার পর মাত্র তিন বছর সাত মাস সময় তিনি পান তার মধ্যেই এসব পদক্ষেপ নেন। রেডিও-টেলিভিশনে কোরআন তেলাওয়াত, ঈদে মিলাদুন্নবীতে ছুটি প্রদান এ সবই জাতির পিতা করে গেছেন। অর্থাৎ এ দেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিটাকে সম্মান জানিয়ে সবাই যাতে সহজভাবে ধর্মটা পালন করতে পারেন সে ব্যবস্থটা তিনি করে দিয়ে যান।

সর্বশেষ খবর