বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সিলেট

হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে তুঘলকি কান্ড

♦ এক লাফে বেড়েছে ১০-২০ গুণ ♦ কর প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট মহানগরীর উত্তর কাজিটুলার স্বপ্না চৌধুরী দ্বিতল বাসার জন্য বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন ৩ হাজার ২০০ টাকা। নতুন মূল্যায়নে তার হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) নির্ধারিত হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। আগামী অর্থবছর থেকে স্বপ্না চৌধুরীকে গুনতে হবে প্রায় ১২ গুণ কর। একই এলাকার মিসবাহ উদ্দীন বছরে কর দিতেন ১ হাজার ৫০০ টাকা। নতুন করে তার কর নির্ধারণ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। মিসবাহ উদ্দীনের গৃহকর বেড়েছে ২০ গুণ।

স্বপ্না চৌধুরী ও মিসবাহ উদ্দীনের মতো সিলেট নগরীর সব নাগরিকের গৃহকর বেড়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ। হঠাৎ করে গৃহকর নিয়ে সিটি করপোরেশনের এমন ‘তুঘলকি’ কান্ডে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। আকাশচুম্বী কর প্রত্যাহারের দাবিতে তারা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কর পুনর্মূল্যায়নের আবেদনের জন্য প্রতিদিন নগরবাসী ভিড় করছেন নগরভবনে। তবে সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, নগরবাসীর জন্য কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ তিনি করবেন না। বর্ধিত গৃহকর নিয়ে আপত্তি থাকলে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত ৩০ এপ্রিল পঞ্চবার্ষিকী মূল্যায়ন (অ্যাসেসমেন্ট/রি-অ্যাসেসমেন্ট) অনুযায়ী পুনর্নির্ধারিত গৃহকর প্রকাশ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। পুনর্নির্ধারিত কর জানতে ও আপিল করতে নগরবাসীকে ১৪ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ জন্য নগরভবন প্রাঙ্গণে তথ্য ও সহযোগিতা ক্যাম্প স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। পঞ্চবার্ষিকী মূল্যায়নে কী পরিমাণ কর বেড়েছে তা জানতে প্রতিদিন নগরভবনে শত শত ভবন মালিক ভিড় করছেন। বর্ধিত করের পরিমাণ দেখে তাদের চোখ চড়কগাছ। এক লাফে ১০-২০ গুণ কর বৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নগরবাসী।

বর্ধিত কর প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল পর্যন্ত সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স, সিলেট বিভাগীয় গণদাবি পরিষদ, সিলেট সচেতন নাগরিক সমাজ, দুর্নীতিমুক্তকরণ ফোরাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন স্মারকলিপি ও বিবৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া জেলা ও মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকেও একই দাবিতে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। মহানগরীর কয়েকটি স্থানে বিক্ষুব্ধ নগরবাসী বিভিন্ন ব্যানারে প্রতিবাদ সভা করেছেন। সিটি করপোরেশনের বর্ধিত করকে অযৌক্তিক দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

সিসিক সূত্র জানায়, পঞ্চবার্ষিক কর মূল্যায়নের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাঠ জরিপ হয়। ২০২১ সালের আগস্টে সিসিকের তৎকালীন পরিষদের বিশেষ সভায় বর্ধিত এ কর পাস হয়। ওই সময় সিটি করপোরেশনের তৎকালীন ২৭টি ওয়ার্ডের ৭৫ হাজার ৪৩০টি হোল্ডিং থেকে বার্ষিক ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪৪৫ টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ২০২১ সালের অক্টোবরে তা অনুমোদিত হয়। এদিকে, ২০২১-২২ সাল থেকে বর্ধিত কর কার্যকর করার কথা থাকলেও জনক্ষোভ সৃষ্টির আশঙ্কায় তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কার্যকর করেননি। তাই আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর বর্ধিত কর বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

তবে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। জনগণের ভোগান্তি হয় এমন কোনো কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে যদি কোনো অসংগতি বা অমিল থাকে তবে অবশ্যই ডি ফরমের মাধ্যমে আপত্তি জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এ নিয়ে নগরবাসীকে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ ব্যাপারে নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাব।’

 

 

সর্বশেষ খবর