শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

খুলনায় মিলেছে এলপি গ্যাসের অবৈধ ‘ক্রস ফিলিং’ কারবার

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনায় আবারও এলপি গ্যাসের অবৈধ ‘ক্রস ফিলিং’-এর (সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা) সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, হাতেনাতে বিষয়টি ধরা পড়া এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি প্রকাশ  পেয়েছে।

জানা গেছে, নগরীর সিটি বাইপাস সড়কের মোস্তর মোড় এলাকায় সুরাইয়া ফিলিং স্টেশনের আড়ালে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ক্রস ফিলিংয়ের কাজ করছিল। এখানে বসুন্ধরাসহ একাধিক ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসের খালি সিলিন্ডার মজুত রেখে তাতে বিপজ্জনক প্রক্রিয়ায় এলপি গ্যাস ভর্তি করে বাজারজাত করা হচ্ছিল। এতে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ববঞ্চিত ও সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ নিম্নমানের গ্যাস ব্যবহার করে ঝুঁকির মুখে পড়ছিলেন। এ অবস্থায় গত ৭ মে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। আদালত ঝুঁকিপূর্ণ ক্রস ফিলিংয়ের অভিযোগে সুরাইয়া ফিলিং স্টেশনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং অবৈধভাবে ফিলিং করা সিলিন্ডার ও যন্ত্রপাতি জব্দ করে। এই সঙ্গে আদালত পাম্পের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। আদালত পরিচালনা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন। জানা গেছে, ক্রস ফিলিং বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। এর আগে ডুমুরিয়ার লতিফ ফিলিং স্টেশন ও খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির অবৈধ ক্রস ফিলিং ধরা পড়ে। লতিফ ফিলিংয়ের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোস্তর মোড় এলাকায় সুরাইয়া ফিলিং স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরেই ক্রস ফিলিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে বোতলজাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাস দোকানদের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছিল। ৭ মে দুপুরে সুরাইয়া ফিলিং স্টেশন থেকে অবৈধ ক্রস ফিলিং করা ৯৮টি বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারসহ একটি পিকআপ আটক করেন স্থানীয়রা। পিকআপটি এই গ্যাস নিয়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় যাচ্ছিল। খবর পেয়ে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ, বিস্ফোরক পরিদফতরের কর্মকর্তা ও মিডিয়াকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফিলিং স্টেশনের একপাশে আলাদা টিনশেডে এলপি গ্যাসের রিজার্ভার ট্যাংক ও রিফিল করার যন্ত্রপাতি রাখা ছিল। এখানে রাতের আঁধারে অবৈধ ক্রস ফিলিং করা হতো। টিনশেড ঘরের পেছনে ফাঁকা জায়গায় বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের এলপি গ্যাসের খালি বোতলও পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সুরাইয়া ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আরফান ইসলাম তূর্য অবৈধভাবে ক্রস ফিলিংয়ের কথা স্বীকার করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওজন দিয়ে প্রতিটি ১২ কেজির সিলিন্ডারেই এক থেকে দেড় কেজি গ্যাস কম পাওয়া যায়। একটি সিলিন্ডারে কোনো গ্যাস না থাকলেও তার মুখটি বসুন্ধরা গ্যাসের লেভেল দিয়ে আটকানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এখানেই গ্যাস রিফিল করার পর সিলিন্ডারের মুখে বসুন্ধরার লেভেল ও রাজস্ব আদায়ের সিল দেওয়া হতো। চক্রটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রায় ১৫০-২০০ টাকা কমে এসব সিলিন্ডার বাজারজাত করত।

বাজারে প্রচলিত বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের বর্তমান পাইকারি মূল্য (ডিও) ১৩৯২ টাকা। কিন্তু গ্যাস কম দেওয়া সিলিন্ডারগুলো ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেও তারা মোটা অঙ্কের মুনাফা করেছে। এতে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এলপি গ্যাসের বাজার দর।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর