শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সড়কে ফিটনেসহীন যানবাহনের দাপট

চলাচল করে পুলিশের টোকেন দিয়ে!

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের মহাসড়ক-সড়ক ও অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসহীন যানবাহন। গণপরিবহন থেকে শুরু করে এ তালিকায় রয়েছে ভারী যানবাহন, ট্রাক এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পাশাপাশি জেলার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অবৈধভাবে মেট্রো এলাকায় চলাচল করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। অটোগুলোতে মালিকের নাম হিসেবে রয়েছে সিএমপি ট্রাফিক উত্তরের সার্জেন্ট জহিরুল ইসলামের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর। মূলত ট্রাফিক পুলিশের ‘বিশেষ টোকেন’ অবৈধভাবে এভাবে বিভিন্ন যানবাহন চলছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধ যানবাহন-ফিটনেসহীন গাড়ি যার হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ সোচ্চার হলে তা অনেকাংশে কমে আসবে। তবে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে ফিটনেসহীন গাড়িসহ সব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলায়েন্সে আছি। বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) সৈয়দ আইনুল হুদা বলেন, ‘অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। নির্বাচনের কারণে হয়তো কয়েকদিন হয়নি। তবে অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে আমরা জিরো ট্রলায়েন্স নীতি গ্রহণ করেছি। সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আনার জন্য বিআরটিএ সর্বোচ্চ কাজ করছে। অটোরিকশার মালিকানার বিষয়ে সিএমপি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের সার্জেন্ট জহিরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অস্বীকার করেন। পরোক্ষণে চালকের মুঠোফোনে কল দিয়ে কেউ গাড়ি আটক করেছে কি না জানতে চান। চালকের কাছ থেকে মুঠোফোন নিয়ে প্রতিবেদক ফের পরিচয় দিয়ে কথা বললে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।  এরপর একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জানা যায়, সড়ক-মহাসড়কে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। ফিটনেস না থাকার কারণে বেশির ভাগই ক্ষেত্রে ঘটছে দুর্ঘটনা। কারণ নিয়মিত ফিটনেস না করানোর কারণে যানবাহনের চেসিস, ব্রেকিং সিস্টেমে সমস্যা থাকে। ফলে অনেক সময় গাড়ি ব্রেক ফেইল করে গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অনেক সময় মাঝ সড়কেই গাড়ি বিকল হয়ে যানজট তৈরি করে। আবার অনেক সময় বাস্তবে ফিটনেস সনদ থাকা সত্ত্বেও অনেক গাড়িরই প্রকৃত ফিটনেস থাকে না। তবে বিআরটিএতে তদবির ও দালালের মাধ্যমে ফিটনেস নবায়নের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যার কারণে ফিটনেসহীন গাড়ির চলাচল রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে চলাচল করে প্রায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬টি। তার মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার মোটরসাইকেল।  মোটরসাইকেলের কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। বাকি ১ লাখ ৬২ হাজার ৫১৬টি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেটের আওতায়। এর মধ্যে নিয়মিত ফিটনেস রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৪০টি গাড়ি। বাকি ৩১ হাজার ৯৭৬টি গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। এটা শুধু রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ির হিসাব। তবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া, গ্যারেজ নম্বরসহ অবৈধভাবে নগরে কত গাড়ি চলাচল করছে তার কোনো তথ্য নেই। অভিযোগ রয়েছে- চট্টগ্রামে চলাচল করা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাড়ির ফিটনেস না থাকলেও, গাড়িগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক। গাড়িগুলো চলাচলের জন্য ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো টাকার বিনিময়ে দেন কথিত টোকেন। টোকেন দেওয়ার বদৌলতে সংস্থাগুলো মাসোহারা নেয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অভিযান অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়কে অনেক ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। সড়কে এত ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের সুযোগ পায় কী করে? সড়কের নৈরাজ্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একজন যাত্রী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে যাত্রী ও স্বজনদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। ফিটনেসবিহীন গাড়ি কোনোভাবেই যাতে সড়কে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, মোটরসাইকেল ছাড়া যে কোনো যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন করানোর সময় গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া হয়। দুই বছর পর পর নবায়ন করতে হয় এ ফিটনেস সার্টিফিকেট। কিন্তু বেশির ভাগই যানবাহন মালিক রেজিস্ট্রেশন করানোর সময় যে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয় তাতেই বছরের পর বছর পার করে দেয়। কারণ ফিটনেস সনদ নিতে হলে ভ্যাট, ট্যাক্সসহ বড় একটি অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। এ অর্থ ফাঁকি দেওয়ার জন্য মূলত ফিটনেস নিতে অনীহা চালক-মালিকদের। তবে গত এপ্রিল মাসে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযান চালিয়ে ৯২টি মামলা করা হয়েছে। এসব অভিযানে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর