শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

হবিগঞ্জে তিন খুনের নেপথ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব, নিহতদের লাশ দাফন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার আগুয়া গ্রামে তিন খুনের নেপথ্যে ছিল গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে কয়েক বছর ধরে উত্তপ্ত ছিল পুরো গ্রাম। এরই মধ্যে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। যার শেষটা হয়েছে তিন খুনের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার তিন খুন হওয়ার পর থেকেই পুরো গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। চারদিকে থেমে থেমে ভেসে আসছে কান্নার রোল। স্বজনহারানোর আহাজারিতে ভারী আশপাশের আকাশ-বাতাস। গতকাল বাদ জুমা তিনজনের লাশ বাড়িতে পৌঁছলে কান্নার রোল পড়ে যায়। বাদ আসর তিনজনকে গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নিহত তিন ব্যক্তির গোষ্ঠীর সরদার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সিএনজি স্ট্যান্ডের ম্যানেজার বদরুল আলম বদির ও সোহেল মিয়া গত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে সোহেল মিয়া জয়ী হন। এরপর থেকে বদরুল আলম ও তার লোকজন আমাদের গোষ্ঠীর সঙ্গে মারামারির চেষ্টা করছে। এর আগেও বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে আমার ভাতিজা কাদির মিয়া বাড়ির পাশ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী ওঠায়। বিষয়টি জেনে ম্যানেজার বদরুল আলম তাকে স্ট্যান্ডের অফিসে ডাকেন। কাদির মিয়া অফিসে গেলে তাকে কয়েকজন মিলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করেন। ঘটনাটি লাইন সভাপতি আশিক মিয়াকে জানালে তিনি বিষয়টি দেখার আশ^াস দেন। বেলা ২টার দিকে বদরুল আলম ও তার লোকজন কাদিরের বাড়ি ঘেরাও দিয়ে হামলা চালায়। এরপর দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আমাদের তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বদরুলের লোকজন।’

নিহত সিরাজ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবাই আহাজারি করছেন। ১০ বছরের মেয়ে মার্জিয়া বিছানায় লুটোপুটি খেয়ে বলছে- এখন আমি কাকে বাবা ডাকব? কে আদর করবে? এ সময় সিরাজ মিয়ার মা ও স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তারা সবাই এ হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন।

নিহত লিলু মিয়ার মা সুন্দর বানু বলেন, ‘যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। আমার চারজন নাতি-নাতনি এতিম হয়ে গেল। এখন তাদের মুখে অন্ন দেওয়ার কেউ রইল না।’

অটোচালক কাদির মিয়ার বাড়িতেও একই দৃশ্য। বাড়ির উঠানে কাদির মিয়ার এক বছর বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে তার মা আহাজারি করছেন। তিনি দোষীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার ভাই বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয় বদরুল আলম বদির। এরপর থেকে বদির ও তার লোকজন আমাদের সঙ্গে ঝগড়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।’

সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে ডিআইজি নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ন্যায়বিচারের আশ^াস দেন।

এ বিষয়ে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিন খুনের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে অভিযুক্তদের আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার আগুয়া গ্রামে সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- লিলু মিয়া (৫০), অটোচালক কাদির মিয়া (৩০) ও সিরাজ মিয়া (৩৬)। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত তিনজন সিলেট ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর