রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক বিপ্লবের অপেক্ষায় উত্তরাঞ্চল

ডিসেম্বরেই উদ্বোধন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু, ৮৪ ভাগ কাজ শেষ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

অর্থনৈতিক বিপ্লবের অপেক্ষায় উত্তরাঞ্চল

যমুনার বুকে দৃশ্যমান উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রমত্তা যমুনার বুকে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। ৫০টি পিয়ারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসানো শেষ। এরপরই সেতুর পুরো ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সুপার স্ট্রাকচার দৃশ্যমান হয়। ৪০ থেকে ৫০ ভাগ ডাবল ট্র্যাকার রেললাইন বসানোর কাজও সম্পন্ন। আগামী ডিসেম্বরেই সেতুটির পুরো কাজ শেষ হবে এবং উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সবাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান জানান, ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ দুটি প্যাকেজের আওতায় বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের প্রায় ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে রেললাইন বসানো, অ্যালাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন প্লাটফরম ও স্টেশন বিল্ডিং স্থাপনের কাজ চলছে। ছোট ছোট কিছু পেরিমিটার ফেল্টের কাজ চলমান। তিনি বলেন, ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের কাজ আগস্ট মাসে এবং ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এরপরই সেতুটি উদ্বোধন করা হবে। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটে শিডিউল বিপর্যয়। এতে বাড়তে থাকে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। ২০২১ সালের মার্চে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেল সেতুর পিয়ার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। প্রকল্পের তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন সেতু চালু হলে দিনে চলবে ৮৮টি ট্রেন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে নতুন এই রেল সেতুতে ব্রডগেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। এতে সময়ও বাঁচবে, ভোগান্তিও কমবে।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, এটি ডুয়েল গেজের লাইন হওয়ায় ব্রডগেজ ও মিটার গেজ দুই ধরনের ট্রেনই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এটা দীর্ঘমেয়াদে রেলে বড় পরিবর্তন আনবে। একই সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে গতি বাড়বে। কমে যাবে পরিবহনের খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও কমে আসবে।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু উত্তরাঞ্চলবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশাল উপহার। রেল সেতু উত্তরাঞ্চল মানুষের ভাগ্য খুলে দেবে। রেলওয়ে সেতুকে ঘিরে শিল্পপার্ক ও ইকোনোমিক জোনসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। উৎপাদিত পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষিপণ্য স্বল্প খরচে, সঠিক সময়ে পরিবহন করলে কৃষরাও উপকৃত হবে। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।

 

 

সর্বশেষ খবর