রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভয়াবহ সংকটে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম

উপকরণসামগ্রীর সরবরাহ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়াবহ সংকটে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম

চাহিদা অনুযায়ী উপকরণ না থাকায় পরিবার পরিকল্পনার সরকারি সেবা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই সারা দেশে কনডম, মুখে খাওয়া বড়ি ও কিটের মারাত্মক সংকট চলছে। এই সুযোগে বাজারে বেসরকারি কোম্পানির বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে নিম্নবিত্ত দম্পতিদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা দফদতর সূত্রে জানা যায়, এক বছর ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের অস্থায়ী উপকরণসামগ্রীর সরবরাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসব উপকরণের মজুদ খুব সীমিত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং উপকরণ বিতরণের জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও তিনজন পরিবারকল্যাণ সহকারী দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মীদের সপ্তাহে চার দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে দম্পতিদের সঙ্গে আলোচনা ও সামগ্রী বিতরণ করার কথা। উপকরণ ঘাটতির কারণে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের অনেকেই নিয়মিত বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না।

গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের পরিবারকল্যাণ সেবা ও মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন সরকারের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) অধ্যাপক ড. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের কার্যক্রম এখন মুখথুবড়ে পড়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ও লোকবল সংকট দীর্ঘদিনের। যারা সরকারি সরবরাহের জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহার করতেন, তারা যদি এখন বিনামূল্যে উপকরণ না পান তাহলে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ বেড়ে যেতে পারে। এতে মাতৃমৃত্যুও বাড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। কিন্তু তার পরও দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী সংকট মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’

সরকারের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টালে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিসামগ্রীর মজুত কমে এসেছে। গত ১৮ এপ্রিল এই ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ৪১৮টি উপজেলা স্টোরে কোনো কনডম নেই। আরও ৬৮টি উপজেলায় শিগগিরই মজুতশূন্য হবে। ৭৭টি উপজেলা স্টোরে ‘সুখী’ ব্র্যান্ডের তৃতীয় প্রজন্মের খাবার বড়ি নেই। ১৬০টি উপজেলা স্টোরে এই উপকরণের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ১৫১টি উপজেলা স্টোরে বড়ির মজুত শিগগিরই শূন্য হবে। ‘সুখী’ ব্র্যান্ডের দ্বিতীয় প্রজন্মের খাবার বড়ি নেই ৩৫৩টি উপজেলা স্টোরে। ৪৮টি উপজেলা স্টোরে শিগগিরই এই বড়ি শেষ হয়ে যাবে। আরও ২৬টি উপজেলা স্টোরে মজুত সর্বনিম্ন অবস্থায় আছে। ‘আপন’ ব্র্যান্ডের বড়ি নেই ১৭০টি উপজেলা স্টোরে। ১২৫টি উপজেলা স্টোরে দ্রুতই এর মজুত শূন্য হয়ে যাবে। আরও ৯৬টি উপজেলা স্টোরে মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ইনজেকশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দেশের ৪৭৬টি উপজেলা স্টোরে কোনো ইনজেকশন নেই। ১১টি উপজেলা স্টোরে এর মজুত শেষ পর্যায়ে।

সর্বশেষ খবর