শিরোনাম
সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
উপজেলা নির্বাচন

চট্টগ্রামে নির্বাচিত হচ্ছেন স্থানীয় এমপির ঘনিষ্ঠরা!

দলীয় প্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষিত

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে স্থানীয় এমপিদের প্রভাব ‘স্পষ্ট’ হয়ে উঠছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন, নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে স্থানীয় এমপিদের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ সমর্থনের ওপর। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ইতোমধ্যে এমপিদের আশীর্বাদ পাওয়া নেতারাই বিভিন্ন পদে বিজয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও একই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘সবার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। তবে কোনো এমপি এখনো কোনো প্রার্থীকে বাধা দিয়েছেন বলে মনে হয় না। নির্বাচনে সবাই অংশ নিতে পারছেন কি না সেটাই বড়ো বিষয়। সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। ভোটাররা যাকে ভোট দিচ্ছেন তিনি নির্বাচিত হচ্ছেন।’

জানা গেছে, প্রথম ধাপে হওয়া নির্বাচনে মিরসরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক শেখ আতাউর রহমানকে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। নয়নের জনপ্রিয়তা থাকলেও তার বিজয়ে স্থানীয় এমপি মাহবুবুর রহমান রুহেল ও তার বাবা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এদিকে সন্দ্বীপ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আনোয়ার হোসেন। অভিযোগ উঠেছে এই উপজেলায় আনোয়ারকে জেতাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা। ফলে নির্বাচনি মাঠে একা হয়ে পড়েন মিশন। ফলে তার ভরাডুবি হয়। এ ছাড়া এমপির ইশারায় তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ওমর ফারুক ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

সীতাকুন্ড উপজেলায় এমপি এস এম আল মামুনের আশীর্বাদ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুল আলম চৌধুরী। তার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দীন আহমেদ মঞ্জু। শুধু চেয়ারম্যান পদ নয়, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের ওপরও এমপি এবং তাদের অনুসারীদের পরোক্ষ সমর্থন নির্বাচনি মাঠে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এমপিদের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যথাক্রমে এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, নুর মোহাম্মদ ও রুবিনা ইয়াসমিন প্রতিটি পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা তিনজনই এমপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। ফলে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

একইভাবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় স্থানীয় এমপি ড. হাছান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চেয়ারম্যান পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এর বাইরে ফটিকছড়ি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দীন মুহুরী ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বখতিয়ার সাঈদ ইরান। দুজনের মধ্যে স্থানীয় এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ইরানকে বিজয়ী করতে পরোক্ষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

হাটহাজারীতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল আলম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান। এই তিন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস থাকলেও স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পরোক্ষভাবে ইউনুস গণি চৌধুরীকে বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে একাধিক এমপিকে ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি। তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলীয় প্রধানের নির্দেশনার পরও কিছু এমপি এমনটা করছেন। এটা ইতিবাচক নয়। তবে বেশির ভাগ এলাকায় স্থানীয় এমপিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতি আবর্তিত হয়। ফলে এমপিরা কিছু চাইলে তার অনুসারীরা তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। এটা অস্বীকারের উপায় নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর