বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কুকি-চিনের কাছে প্রশিক্ষিত হিন্দালের তিন জঙ্গি আটক

গ্রেফতার মশিউর প্রথমে ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। ২০০২-২০০৩ সালে হুজির সদস্য হিসেবে ময়মনসিংহে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক

বান্দরবানের ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’-এর (কেএনএফ) কাছে প্রশিক্ষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার তিন সদস্যকে রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন রানা শেখ ওরফে আমির হোসাইন, মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার ও হাবিবুর রহমান। এদের মধ্যে রানা শেখ ছিলেন জঙ্গি সংগঠনের একজন রিক্রুটার। সারা দেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণের জন্যে বান্দরবানে কুকি-চিনের আস্তানায় পাঠাতেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি মোবাইল ফোন ও প্রশিক্ষণের ভিডিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া রানা শেখ ওরফে আমির হোসাইন ২০০২ সালে হুজিনেতা ও ফাঁসির আসামি আবদুর রউফের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহে যান। ময়মনসিংহের ভালুকায় সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৩ সালে বাবা, মামা, ভগ্নিপতিসহ মোট ১৮ জন সদস্য হুজি নেতা আবদুর রউফের সঙ্গে বৈঠকের সময় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। এরপর সাজা খেটে বেরিয়ে আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। বর্তমানে কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিলেন, পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতার মশিউর প্রথমে ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। ২০০২-২০০৩ সালে হুজির সদস্য হিসেবে ময়মনসিংহে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৩ সালে অপরাপর হুজি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেডসহ ঝালকাঠিতে গ্রেফতার হয়ে সাড়ে ৪ বছর সাজা খাটেন। ২০২১ সাল থেকে পাহাড়ি বৈরী পরিবেশে কমান্ডো হিসেবে টিকে থাকা, আন আর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল চালানো, বোমা সামগ্রী তৈরি এবং ব্যবহারসহ সিকিউবি বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য দুই বছর বান্দরবানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অবস্থান করেন। এই কষ্টকর প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে সমতলে ফেরত আসেন মশিউর। আর হাবিবুর ছিলেন সংগঠনের নতুন রিক্রুট। তিনি আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মী হিসেবে আমিরের অধীনে কাজ করতেন। আমির একই মতবাদে দীক্ষিত করে তাকে ইতোমধ্যে জঙ্গি সংগঠনে রিক্রুট করে বান্দরবানে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ডিবি প্রধান হারুন আরও বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম ও জামায়াতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) মুক্তিপ্রাপ্ত এবং পলাতক বেশ কিছু সদস্য মিলেমিশে একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’ গঠন করেন।

নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা বিশ্বাস করে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক ধর্মযুদ্ধ হবে। কোনো এক সময় দাজ্জালের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে মুসলিম নিধনের বড় রকমের চেষ্টা করা হবে। ইসলামকে সমুন্নত রাখতে এবং মুসলমানদের সুরক্ষা দিতে যারা ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক এ ধর্মযুদ্ধে তারা অংশ নেবে। বদরের যুদ্ধে অংশ নিলে শহীদ অথবা গাজীদের মতো মর্যাদা পাবেন বলে বিশ্বাস করেন তারা।

সর্বশেষ খবর