শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

যেখানে-সেখানে মানবভ্রূণ

করোনা-পরবর্তী সময়ে বেড়েছে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে গত দুই মাসে উদ্ধার করা হয়েছে চারটি মানবভ্রূণ । কখনো ময়লার ভাগাড় থেকে আবার কখনো সড়কের পাশেই পাওয়া যাচ্ছে অপরিণত ও মৃত এসব ভ্রƒণ। সর্বশেষ গত ১৪ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পূর্ব নাসিরাবাদে ময়লার ভাগাড় থেকে দুটি মানবভ্রূণ উদ্ধার করে পুলিশ। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আর অবাধ মেলামেশার কারণে মূলত মানবভ্রূণ হত্যার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরবর্তী সময়ে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ বেড়েছে। জন্মহার শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি। ২০২৩-২৪ সালে প্রজনন হার ২.৬, নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১৬ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অনিচ্ছাকৃত গর্ভপাতের হার ছিল ৭.৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া ইচ্ছাকৃত গর্ভপাতের হার ২.১২ শতাংশ। গাইনোকোলজিস্টরা বলছেন, মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে তা নিয়মিত করার এক ধরনের চিকিৎসার নাম ‘এমআর’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণের কারণেই মাসিক বন্ধ হয়। সরকারি হাসপাতালেই এমআরের আলাদা বিভাগ আছে। কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বৈধভাবেই এমআর করা হয়। তবে মানহীন কতিপয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গর্ভপাতের যে ব্যবসা গড়ে উঠেছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, সেখানে প্রশিক্ষিত ডাক্তার ছাড়াই নার্স বা আয়া দিয়েই গর্ভপাতের কাজ করা হচ্ছে। ফলে গর্ভবতী ও নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। সাধারণত অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ এড়াতে অনেকে অবৈধ ক্লিনিকে এমআর করাতে আসেন। তাদের বড় একটি অংশ বয়সে তরুণী। যারা আসেন তারা বিষয়টি গোপন রাখতে চান। কেউ পরিবারের সদস্যদেরও জানাতে চান না। কেউ আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়েই আসেন। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা। প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সোমা চৌধুরী বলেন, দেশে মাতৃমৃত্যুর একটি কারণ অনিরাপদ গর্ভপাত।

অনেক ক্ষেত্রেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটে। অনেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তান নিতে চান না। কিন্তু গর্ভধারণ হলে তারা এমআর করাতে চান। এ ছাড়া সচেতনতার অভাব, জবরদস্তি ও প্রতারণা-প্রলোভনের কারণেও অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটছে। আমরা কাউন্সিলিং করে মাকে এমআর থেকে বিরত রাখি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুতম্যাকার ইনস্টিটিউটের জরিপ মতে, দেশে দৈনিক গড়ে স্বতঃপ্রণোদিত গর্ভপাতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৭১টি। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১ হাজার নারীর মধ্যে ২৯ জন স্বতঃপ্রণোদিত গর্ভপাত করান। এ ধরনের গর্ভপাতের হার চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার নারীর মধ্যে ১৮ জন। গর্ভপাত করানোর পর প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নারী স্বাস্থ্য জটিলতার শিকার হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর