রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

অস্বস্তিতে ভবন মালিকরা

সিলেটে বর্ধিত কর প্রত্যাহার হচ্ছে না, সমাধান রিভিউতে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল করে যৌক্তিক কর নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন চলছেই। প্রতিদিন বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকার পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ঘোষিত কর স্থগিত বা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। ধার্যকৃত কর নিয়ে যাদের আপত্তি আছে তারা রিভিউ করতে পারবেন। রিভিউতে কর চূড়ান্ত করা হবে। এজন্য আপত্তির মেয়াদ ১৪ দিন বাড়িয়ে ২৮ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। নগরভবন কর্তৃপক্ষের এমন অনড় মনোভাব অস্বস্তিতে ফেলেছে বাসার মালিকদের। তারা মনে করছেন, যেভাবে ১০ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি করা হয়েছে তা রিভিউ করেও যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা অসম্ভব। তবে রিভিউতে কর সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র জানায়, নগরীতে পঞ্চবার্ষিক কর মূল্যায়নের জন্য সর্বশেষ মাঠ জরিপ হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। জরিপ শেষে ২০২১ সালের সিসিকের তৎকালীন পরিষদের সভায় বর্ধিত এই কর পাস করে সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। ওই সময় সিটি করপোরেশনের তৎকালীন ২৭ ওয়ার্ডের ৭৫ হাজার ৪৩০টি হোল্ডিং থেকে বার্ষিক ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪৪৫ টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বর্ধিত এই কর ২০২১-২২ সাল থেকে আদায়ের কথা থাকলেও তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কৌশলগত কারণে সেটি কার্যকর করেননি। গত ৩০ এপ্রিল পুনর্নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রকাশ করে সিসিক। বর্ধিত কর নিয়ে আপত্তি জানাতে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ১৪ মে পর্যন্ত। নতুন ঘোষিত ট্যাক্স ১০-৫০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্মিত হন নগরবাসী। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। সিসিকের আরোপিত এই ট্যাক্স অযৌক্তিক দাবি করে তা স্থগিতের দাবিতে মাঠে নামেন তারা। গেল ১৮ দিন ধরে তারা এ দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। আন্দোলনের মুখে সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে রিভিউ বোর্ড গঠন করে কর সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সঙ্গে তিনি আপত্তি জানানোর সময় দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৮ মে পর্যন্ত করেন। তারপরও ঘোষিত বর্ধিত কর স্থগিত করে যৌক্তিক কর ধার্যের দাবিতে তারা এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও সমাবেশ করে যাচ্ছেন তারা। ওয়ার্ড ও এলাকাভিত্তিক আন্দোলনও চলছে প্রতিদিন।

ভবন মালিকদের অভিযোগ, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের করের চেয়ে নতুন মূল্যায়িত করের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। হাজার টাকার ট্যাক্স এক লাফে লাখের কোটা ছুঁয়েছে। এখন রিভিউ করে ৭০-৮০ ভাগ কমালেও সেটা যৌক্তিক করের চেয়ে বেশি হবে। নগরবাসীর দাবি ছিল অযৌক্তিক এই কর প্রত্যাহার বা স্থগিত করে নতুন অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে যৌক্তিক কর ধার্য করা। কিন্তু সিটি করপোরেশন সেটা না করে ‘সহনশীল করের’ মুলা ঝুলিয়েছে। এরপরও বাধ্য হয়ে ভবন মালিকরা আপত্তি ফরম ফিলাপ করে কর কমানোর আবেদন করছেন। বর্ধিত কর প্রত্যাহার না হলে ভবন মালিকরা বাসাভাড়া বৃদ্ধি করতে বাধ্য হবেন। এতে ভাড়াটেরাও পড়বেন বিপাকে।

পুনঃমূল্যায়িত কর প্রসঙ্গে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ঘোষিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই কর নিয়ে যারা অসন্তুষ্ট তারা আপিল করতে পারেন। আপিলের সময় শেষ হলে প্রতিটি ওয়ার্ডে রিভিউ বোর্ড করে সবার বক্তব্য শোনা হবে। এরপর সহনীয় মাত্রায় কর চূড়ান্ত করা হবে। নগরবাসীর কষ্ট হয় এমন কোনো কিছু তিনি করবেন না বলেও আশ্বস্ত করেন মেয়র।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর