শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজধানীতে তীব্র হচ্ছে কবরস্থানের সংকট

নাগালের বাইরে সংরক্ষণ ফি

আবির আব্দুল্লাহ

রাজধানী ঢাকাতে প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মুসলিম, মৃত্যুর পর যাদের দাফন বা কবরস্থ করতে হয়। কিন্তু এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে কবর দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে নগরবাসী। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কবরস্থান রয়েছে মাত্র ৯টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে রয়েছে তিনটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ সিটিতে জনসংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কবর রয়েছে মাত্র ৪৬ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে সংরক্ষিত কবর রয়েছে সাড়ে ৬ হাজার। সংরক্ষিত কবর বাদ দিলে দক্ষিণে প্রতি ৩০০ জন মানুষের জন্য কবর রয়েছে একটি। তা-ও নতুন কবর নয়। পুরাতন কবর। কারণ ইতোমধ্যে কবরস্থানগুলোর ধারণ ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। এখন ওইসব কবরস্থানে অস্থায়ীভাবে কবর দেওয়া হচ্ছে। মানুষ এখন বাধ্য হয়ে পুরনো কবরগুলোতেই প্রিয় মানুষদের দাফন করছে। অভিযোগ রয়েছে, কবরস্থানের কর্মচারীদের প্রতিমাসে ‘বকশিশ’ না দিলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই  ভেঙে ফেলে কবর। খুঁজে পাওয়া যায় না কবর।

কবর সংকট নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় নতুন কবরস্থানের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কবর সংরক্ষণকে নিরুৎসাহিত করতে ফি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি আমরা কবরস্থানের ডাটাবেইজ তৈরি, ম্যাপিংয়ের কাজসহ কবরস্থান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে স্বজনদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি ব্যতীত অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ সিটিতে  লোকসংখ্যা ৫৫ লাখ। তাদের অধীনে রয়েছে ৬টি কবরস্থান। বনানী, উত্তরা- ৪, ১২ ও ১৪ নম্বর সেক্টর, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও রায়েরবাজার কবরস্থান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জনসংযোগ অফিস জানায় তাদের অধীনে রয়েছে আজিমপুর, খিলগাঁও ও জুরাইন (মুরাদপুর ও ধলপুরসহ) কবরস্থান। আজিমপুর কবরস্থানে কবর ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার, খিলগাঁওয়ে ৪ হাজার ও জুরাইনে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। এর মধ্যে আজিমপুরে সাড়ে ৪ হাজার ও জুরাইনে আড়াই হাজার সংরক্ষিত কবর রয়েছে। বাকিগুলো সাধারণ কবর। তবে এসব সাধারণ কবরের ধারণ ক্ষমতাও পূর্ণাঙ্গ হয়েছে অনেক আগেই। আজিমপুর কবরস্থানের দাফনের সক্ষমতা রয়েছে ৩০ হাজার। এতসব কবরের মাঝে কোনটি কার তা বোঝার উপায় নেই। একটি আরেকটির গায়ে লেগে আছে। সামনের কবরগুলো পরিপাটি থাকলেও পেছনের দিকের কবরগুলো পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়। জঙ্গলে ঢেকে গেছে অনেক কবর। এ ছাড়া অনেক কবরে ওপরের মাটি সরে বাঁশ-চাটাইয়ের দেখা মিলছে। তবুও অবশিষ্ট নেই নতুন কবরের জায়গা। অধিকাংশ কবরের পাশে তিন-চারটি ভিন্ন নামের প্লেট লাগানো। স্থায়ী কবরের ব্যবস্থা না থাকায় নির্দিষ্ট সময় পর একই জায়গায় পুনরায় কবর দেওয়া হচ্ছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জনের শেষ স্মৃতিটুকুও। একই অবস্থা দেখা গেছে রায়ের বাজার কবরস্থানেও।

কবর পরিচর্যার জন্য দিতে হয় ‘বকশিশ’ : কবর সংকটের মাঝে নির্ধারিত ফি দিয়ে দাফন শেষ হলেও ভোগান্তি কাটে না মৃতের স্বজনদের। কবরের পরিচর্যার জন্য দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। না হয় অযত্ন-অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় প্রিয়জনের কবরটুকুও। অভিযোগ রয়েছে, কবরস্থানের কর্মচারীদের প্রতিমাসে ‘বকশিশ’ না দিলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে ফেলে কবর। বাধ্য হয়ে অনেকেই প্রতি মাসে কবরের দেখভালের জন্য কর্মচারীদের টাকা দিয়ে থাকেন।

নাগালের বাইরে কবর সংরক্ষণ ফি : স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যরা কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে গুনতে হয় বাড়তি অর্থ। ঢাকা দক্ষিণে চার মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ১০ বছরের কবর সংরক্ষণ ফি ৫ লাখ টাকা, ১৫ বছরে ১০ লাখ, ২০ বছরে ১৫ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ২০ লাখ টাকা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তুলনায় উত্তরে কবর সংরক্ষণ ফি কয়েকগুণ বেশি। উত্তর সিটির কবরে ১৫ বছর ও ২৫ বছর মেয়াদে কবর সংরক্ষণের সুযোগ দেয়। তবে কবরস্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ফি। বনানী কবরস্থানে ১৫ ও ২৫ বছর মেয়াদি কবর সংরক্ষণ ফি যথাক্রমে ১ কোটি ও দেড় কোটি টাকা। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে যথাক্রমে ৭৫ লাখ ও ১ কোটি, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে ৫০ লাখ ও ৭৫ লাখ, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে ৩০ লাখ ও ৫০ লাখ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ২০ লাখ ও ৩০ লাখ, রায়েরবাজার কবরস্থানে ১০ লাখ ও ১৫ লাখ টাকা।

সংরক্ষিত কবরেও দাফন ফি : জানা যায়, সংরক্ষণ করা কবরে মৃতের আত্মীয় তথা মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই কিংবা বোনকে দাফন করা যায়। তবে এজন্য গুনতে হয় নির্ধারিত ফি। দক্ষিণ সিটিতে এমন পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা। তবে উত্তরের বনানী কবরস্থানে এই ফি ৫০ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য কবরস্থানে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা।

 

সর্বশেষ খবর