সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বোরোর ফলন ও দামে কৃষকের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে থাকবে সোনালি ফসল কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার ব্যস্ততা। এরই মধ্যে রাজশাহীতে ৬০ শতাংশ জমির ধান ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, জেলায় এবার গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও। এবার ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। সেই খুশি বাড়িয়েছে আশানুরূপ বাজার দর।

জেলার হাট-বাজারে এখন নতুন ধান। অনেকে চাষের খরচের পাওনা মেটাতে জমি থেকে মাড়াইয়ের পরপরই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। রাজশাহীর বাজারে নতুন ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। শুক্রবার জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাটে এ দামে ধান বিক্রি হয়েছে। তবে জমি থেকে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে। রাজশাহীর কৃষকরা বলছেন, রবিশস্য তুলতে দেরি হওয়ায় এবার বোরো আবাদের সময় কিছুটা দেরি হয়েছে। অধিকাংশ চাষি দেরিতে ধান রোপণ করেছেন। তার মধ্যে ছিল গরমের নেতিবাচক প্রভাব। পানির সংকটে রোপণ নিয়ে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে সব উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা কাটিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এখন ফসল ঘরে তোলায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বাগমারার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক আজাদ আলী বলেন, ‘এবার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনেকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করে রোপণ করতে দেরি হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ বছর সার ও কীটনাশকের দামও বেশি। তিনি বলেন, ‘উৎপাদন ভালো হলেও লাভ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ভালো দাম পেলে আমরা লাভবান হব।’

তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, মান্দার সবাই হাটে ১ হাজার ৩৮০ টাকা মণ দরে ১০ মণ ধান বিক্রি করেছি। এই ধান গত বছর এ সময় বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে। এবার মণপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা বেশি।

এ বছর আড়াই একর জমিতে বোরো চাষ করা গোদাগাড়ীর শফিকুর রহমান বলেন, ‘এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো। এ ছাড়া গত বছর ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিক সংকট ছিল। ফলে বেশি মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিতে হয়েছে। এবার সে সমস্যা হয়নি। ফলে সহজেই কম খরচে ধান ঘরে তুলতে পেরেছি।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, ‘গত এক দশকে জেলায় বোরো উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এবার এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার আবাদ বেশি হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৬০ শতাংশের বেশি ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে।’

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ৭০ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭০ টন ধান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে, যেখানে উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৯ টন ধান।

 

 

সর্বশেষ খবর