মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস

বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

♦ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ♦ ভেসে গেছে মাছের ঘের ♦ পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় খুলনা জেলার ৪টি উপজেলায় বাঁধ ভেঙে বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। ফসলের খেত ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। প্রবল বাতাসে গাছপালা উপড়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে কয়েক লাখ গ্রাহক। গ্রীষ্মকালীন সবজি ও মাঠের ফসল নষ্ট হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক।

গতকাল ভোররাতে জোয়ারের পানির তীব্র চাপে কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে সিংহেরচর, মহারাজপুর ইউনিয়নে দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে বাঁধ ভেঙে যায়। এ ছাড়া দাকোপের তিলডাঙা কামিনীবাসিয়া, পাইকগাছায় দেলুটি ও রূপসার আঠারবেকি নদীর বাঁধ ভেঙে আশপাশে প্রায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে নগরীর লবণচরা, টুটপাড়া, মহিরবাড়ি খাল পাড়, শিপইয়ার্ড সড়ক, রূপসা, চাঁনমারী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। দমকা বাতাসে ৯টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৮টি খুঁটি ভেঙে গেছে ও ১২১টি স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে।

খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান জানান, রবিবার রাত থেকে প্রায় ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। একইভাবে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) আওতায় শহরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। শহরের অনেক স্থানে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা যায়নি।

তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ও অতিবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃৃষক। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে লবণপানিতে ফসলের মাঠ, গ্রীষ্মকালীন সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। আর্থিক ক্ষতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

রূপসার আঠারবেকি নদীর বাঁধ ভেঙে লবণপানিতে শ্রীরামপুর বিলের ৩ শতাধিক কৃষকের সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানে গ্রীষ্মকালীন টম্যাটো, আলু, পটোল, ঝিঙে, উস্তা, করলা, ঢ্যাঁড়শ, লাল শাকের আবাদ করেন কৃষক। এর ওপরই চলে তাদের জীবন-জীবিকা।

কৃষক আবু কামাল জানান, উৎপাদিত প্রায় সব সবজি বিক্রির উপযোগী হয়েছিল। কিন্তু লবণ পানিতে প্রায় ৫ লাখ টাকার সবজির ক্ষতি হয়েছে। অপর কৃষক আবদুস সালাম জনান, প্রতিদিন খেত থেকে ৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতেন। লবণ পানিতে পুরো সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, যেসব স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, বনের গাছপালা ঝড়ের গতিবেগ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে বনের প্রায় ৮৫টি মিষ্টি পানির পুকুরে লবণপানি ঢুকেছে। কিছু গাছপালা ভেঙেছে। তবে এখন পর্যন্ত বন্য প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর