শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন

চসিক-সিডিএ একাট্টা

পানিপ্রবাহে ১৩১ প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চসিক-সিডিএ একাট্টা

জলাবদ্ধতা যেন চট্টগ্রাম নগরের অভিশাপ। সামান্য বৃষ্টি হলেই কোমর পানি জমে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। কখনো কখনো পানি ওঠে ঘরবাড়িতেও। তবে চট্টগ্রামের এই অভিশাপ নিরসনে এবার মাঠে নেমেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নগর উন্নয়নের প্রধান এই দুই সংস্থা একযোগে কাজ শুরু করেছে। পানি নিষ্কাশনে বাধা পায় এমন ১৩১টি স্পট চিহ্নিত করেছে সিডিএ। পরিদর্শন করছে প্রতিটি স্পট। অন্যদিকে চসিক শুরু করছে ওয়ার্ডভিত্তিক নালানর্দমা পরিষ্কারের কাজ। এর আগে গত বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিয়ে চসিক-সিডিএ ভিন্ন সুরে কথা বলেছে। দুই সংস্থার প্রধান পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্যও দিয়েছেন। তবে এ বছর দুই সংস্থার প্রধানরা জলাবদ্ধতা ইস্যুতে অভিন্ন কথা বলছেন। জানা যায়, নগরে আছে অন্তত ২৪টি সেবা সংস্থা। এর মধ্যে ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের সংযোগ লাইনের বিভিন্ন পাইপ নগরের বিভিন্ন নালা, কালভার্ট ও ব্রিজের নিচ দিয়ে পরিচালিত হয়েছে। এসব সংযোগ পাইপের কারণে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। সিডিএ এ তিন সংস্থার পরিচালিত পাইপগুলো নিয়ে সার্ভে করে। পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধক ওয়াসার ৭৫টি এবং কেজিডিসিএলের ৫৬টি পাইপ চিহ্নিত করা হয়। তালিকাটি গত সোম ও মঙ্গলবার সিডিএ চেয়ারম্যান সরাসরি ওয়াসা ও কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে হস্তান্তর করেন। অন্যদিকে, চসিক নগরের নালা ড্রেন ও খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক পরিষ্কারের জন্য পরিচালিত হচ্ছে কর্মসূচি।

চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, জলাবদ্ধতা আমাদের বড় সমস্যা। এখন এ সমস্যা নিরসনে চসিক ও সিডিএ একসঙ্গে কাজ করবে। সিডিএ মেগা প্রকল্পের অধীন কাজগুলো সুচারুরূপে পরিচালিত করছে। একই সঙ্গে চসিকও ওয়ার্ডভিত্তিক নালা ড্রেন ও খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। দুই সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, আমরা জরিপ করে দেখলাম সেবা সংস্থার অনেক পাইপে আবর্জনা আটকে আছে। এতে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ক্ষেত্রবিশেষ এটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আমি অনেক স্পট পরিদর্শন করে দেখেছি। তাই ওয়াসা ও কেজিডিসিএলের মোট ১৩১টি পাইপ চিহ্নিত করে তালিকাটি তাদের সরাসরি দিয়ে এসেছি। তাদের অনুরোধ করেছি, যত দ্রুত সম্ভব পাইপগুলো সরিয়ে ফেলতে। কিছুদিন পর আমরা সেটি আবারও ফলোআপ করব।

জানা যায়, গত শনি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কখনো থেমে থেমে কখনো মুষলধারে বৃষ্টিতে নগরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এ নিয়ে অন্তহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। টানা বর্ষণের কারণে নগরের ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, জিইসি, ২নং গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, চকবাজার, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ এলাকার বিভিন্ন স্থান, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, কাপাসগোলা ও বাদুরতলা এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা হয়েছে নগরের সড়ক, উপসড়ক ও অলি-গলিতে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট।

প্রসঙ্গত, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড। বর্তমানে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ ভৌতিক কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীন নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচটি স্লুইস গেট। ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ প্রায় শেষ।

চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরে নালা ড্রেন আছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে মেগা প্রকল্পের অধীন ৩০২ কিলোমিটার ড্রেন ও নালার কাজ শেষ। কিন্তু বাকি ১৩০০ কিমি নালা-ড্রেনগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব চসিকের। চসিক গত বছর প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নালা ড্রেন পরিষ্কারের কথা বলেছিল। এরপরও এখন নালা ড্রেনগুলোয় আবর্জনা জমে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, নগরে বর্তমানে খাল আছে ৫৭টি। এর মধ্যে প্রকল্পের অধীন সংস্কার করা হচ্ছে ৩৬টি। বাকি ২১টি খাল এখনো সংস্কারের বাইরে। তবে খালগুলো নিয়ে চসিক প্রকল্প গ্রহণ করতে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর