শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

হাসান ইমন

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

আসন্ন ঈদযাত্রায় এবারও বাড়ি ফেরা মানুষের মনে ভোগান্তির শঙ্কা বিরাজ করছে। প্রতিবছর সড়ক ও মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ২১৭ পশুর হাট বসে। এসব হাটের কারণে যানজট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সড়কগুলোর ১৫৫টি স্থানে যানজটপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এ ছাড়া সড়কে যাত্রীবাহী বাস ও পশুবাহী পরিবহনের চাপ থাকায় যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র  মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলো পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে বাস্তবায়ন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

ঈদযাত্রার এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে এক সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় সড়কের পাশে অস্থায়ী পশুরহাট ও যানজটপ্রবণ ১৫৫টি স্থান এবং ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়।

মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ২১৭ পশুর হাট সারা দেশে সড়ক ও মহাসড়কের পাশে ২১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। যেগুলো যানজট তৈরি করতে পারে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় সড়কসংলগ্ন ৩০টি হাট, কক্সবাজার জেলায় ২৩টি, ঢাকা জেলায় ১৫টি, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৩টি, নাটোর জেলায় ১২টি, গাজীপুরে ১১টি, পঞ্চগড় ও বগুড়ায় ৯টি, সিলেটে ছয়টি, কুমিল্লা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ভোলা, খুলনা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় পাঁচটি করে সড়কসংলগ্ন হাট রয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল, যশোর, কুষ্টিয়া জেলায় চারটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, শেরপুর জেলায় তিনটি করে। সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠি, মাগুরা ও নড়াইলে দুটি করে এবং হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল,  নেত্রকোনা, মাদারীপুর, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, সাতক্ষীরা জেলায় সড়কের পাশে একটি করে অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। সভায় এই পশুর হাটগুলো আসন্ন ঈদযাত্রায় সড়কে যানজট তৈরি করতে পারে বলে বিআরটিএ আশঙ্কা করেছে। সভায় অস্থায়ী এসব পশুর হাটগুলোকে না বসাতে স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

যানজটপ্রবণ ১৫৫টি স্থান

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি স্পট। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫২টি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছয়টি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আটটি স্থান। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যানজটপ্রবণ এ স্থানগুলো তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশ। একই সঙ্গে টোলপ্লাজায় পশুবাহী পরিবহন পারাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং যানজটমুক্ত রাখতে ইটিসি বুথ চালুর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক টোল আদায় অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিআরটিএর সদর দফতর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, বিআরটিসি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে সাত দিনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখতেও বলা হয়েছে। আর সিএনজি ও ফিলিং স্টেশন সার্বক্ষণিক খোলা রাখা, পণ্য পরিবহনকারী যানবাহনে যাত্রী বহন না করা ও গার্মেন্টসসহ সব শিল্প, কলকারখানার কর্মীদের পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, এবার সড়ক ও মহাসড়কে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সড়ক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি, জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি ও মেট্রোপলিটন সড়ক নিরাপত্তা কমিটি। ঈদযাত্রা নিরাপদ রাখতে বিআরটিএ, পুলিশ কমিশনার, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সওজ অধিদফতর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

এ ছাড়া দেশের সব বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং সড়কপথে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মালামাল যাত্রী পরিবহন না করা এবং নসিমন, করিমন, ইজিবাইক, ইত্যাদি থ্রি-হুইলার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল বন্ধ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর