বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সব অপরাধেই কিশোর গ্যাং!

জড়িত খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও দস্যুতায় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সব অপরাধেই কিশোর গ্যাং!

চট্টগ্রাম নগরীর ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলমের ব্যবসায় চাঁদা চেয়ে ‘বাগড়া’ দেয় কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন। তাদের চাহিদামতো চাঁদা না দেওয়ায় ২৭ মে জাহাঙ্গীরের কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় নয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ওই ঘটনায় আহত রাম লাল দাশের স্ত্রী গীতা দাশ। মামলা দায়েরের পরও অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়নি। উল্টো মামলার বাদীকেই হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এটি চট্টগ্রাম নগরীর কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যের খন্ডচিত্র মাত্র। এভাবে একের পর এক অপরাধের জন্ম দিয়ে চট্টগ্রামের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ঘুম হারাম করেছে কিশোর ও তাদের কথিত বড় ভাইয়েরা। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘কিশোর গ্যাং কালচার রোধে এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। কথিত বড় ভাইদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। স্কুলে-স্কুলে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। একইভাবে অভিভাবকদেরও সচেতন করার কাজ করছি।’ সিএমপির দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে কথিত বড় ভাইদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীতে সক্রিয় রয়েছে আড়াই শতাধিক কিশোর গ্যাং চক্রের ২ হাজারের মতো সদস্য। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং সক্রিয় নগরীর বায়েজিদ, কোতোয়ালি, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, ইপিজেড, পতেঙ্গা, হালিশহর এলাকায়। এ কিশোর গ্যাং চক্রকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতার বিরুদ্ধে। রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কমপক্ষে ১০ কাউন্সিলর ও এলাকার কথিত কিছু বড় ভাই। তাদের মদতে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক-অস্ত্র ব্যবসা, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। সম্প্রতি নগরীতে সংঘটিত বেশ কয়েকটি খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও দস্যুতার ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শিশু কিশোর। এ ছাড়া প্রযুক্তির প্রভাবে সাইবার অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে শিশু কিশোররা।

নগরীতে কিশোর গ্রুপের উত্থান ও প্রসারের কারণ খুঁজতে জরিপ পরিচালনা করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। ওই জরিপে বলা হয়, কথিত কিশোর গ্যাং লিডার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সংস্পর্শে এসে হিরোজম হতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধে। তাদের সংস্পর্শে এসে কিশোরদের আচরণ ও চিন্তার জগতের বড় ধরনের নেতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারা সিগারেট ও মাদকের টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধে। এদিকে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে র‌্যাব-৭। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করছে র‌্যাব। চলতি বছর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং চক্রের কমপক্ষে ২০০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর