শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিলেটে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে চোরাচালান

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে চোরাচালান

সিলেটে পুলিশের অভিযানে আটক ভারতীয় চিনি বোঝাই ১৪ ট্রাক - বাংলাদেশ প্রতিদিন

সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে সারিবদ্ধ লোকজন ফিরছেন বাংলাদেশে। সবার কাঁধে চিনির বস্তা। দেখলে মনে হবে গুদামে আনলোড করার জন্য বস্তা নিয়ে ছুটছেন শ্রমিকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত শ্রমিক এভাবেই ওপার থেকে এপারে নিয়ে আসছেন চিনির বস্তা। ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান করে প্রতিদিন সীমান্ত এলাকা থেকে দিনদুপুরে চোরাই চিনি আসছে সিলেট নগরে। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা পণ্যের মধ্যে চিনি ছাড়াও রয়েছে গরু, মহিষ, কসমেটিক্স, সিগারেট, চকলেট ও বিস্কুট। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চালান আটক হলে ধরা পড়েন চোরাচালান পণ্যের বাহক ও গাড়ির চালক-হেলপার। কিন্তু অধরা থেকে যান গডফাদাররা। গতকাল সড়কে সারিবদ্ধ করে রাখা ভারতীয় চোরাই চিনি বোঝাই ১৪টি ট্রাক আটক করেছে মহানগর পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আনা প্রায় দেড় কোটি টাকার এই চিনির চালান সিলেট শহরের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জানা গেছে, ভারতে ৫০ কেজি চিনির বস্তা বিক্রি হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। যা বাংলাদেশের দামের তুলনায় অর্ধেক। দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় চোরাই পণ্য হিসেবে চিনিকে বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও বিজিবি ‘ম্যানেজ’ করেই সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে এভাবে অবাধে আসছে চিনি। স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত রয়েছেন চোরাকারবারের সঙ্গে। সিলেট শহরের পুরো নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সূত্র জানায়, চোরকারবারে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন রাঘববোয়ালরা। সীমান্ত থেকে সিলেট শহরে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতিটি ট্রাককে ধাপে ধাপে দিতে হয় টাকা। পুলিশ, বিজিবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের সোর্স, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও এই টাকার ভাগ পান বলে অভিযোগ রয়েছে। কোনো পক্ষ টাকা না পেলেই উল্টে যায় গণেশ। কয়েক মাসে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে অন্তত ২০ জনের প্রাণহানিও ঘটেছে বেপরোয়া গাড়ির কারণে।

গতকাল সকাল ৬টায় সিলেট সদর উপজেলার উমাইরগাঁও এলাকার একটি সড়কে সারিবদ্ধভাবে রাখা চিনি বোঝাই ১৪টি ট্রাক আটক করে মহানগর পুলিশ। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, ধারণা করা হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে চিনির বস্তাগুলো ভারত থেকে আনা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি ট্রাকের চিনি আনলোড করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রাকে ৫০ কেজি ওজনের ১৫০ বস্তা চিনি পাওয়া গেছে। এখনো ১০ ট্রাক চিনি আনলোড ও গণনার বাকি রয়েছে।

সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, চোরাচালানের বিরুদ্ধে আগেও পুলিশ অ্যাকশনে ছিল। এখন আরও বেশি সতর্ক রয়েছে।

সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান প্রসঙ্গে জানতে বিজিবি সিলেট সেক্টর কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে তথ্য জানতে তিনি বিজিবি হেডকোয়ার্টারের জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

সর্বশেষ খবর