মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিদায়ী অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি ৪০ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) আইন-২০২৪’ নামে বিলটি সংসদে তোলেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল  থেকে মঞ্জুরিকৃত অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য সম্পূরক বিলটি সংসদে তোলা হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বিকাল ৪টায় জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের চতুর্থ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। বাকি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বাজেট ব্যয় অপরিবর্তিত রয়েছে বা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বাজেট হয় ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। গতকাল সম্পূরক বাজেটের ওপরে আলোচনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০টি মঞ্জুরি দাবি কণ্ঠভোটে পাস হয়। সম্পূরক বাজেটে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পরিকল্পনা বিভাগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ মঞ্জুরি পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। সংসদে উত্থাপিত সম্পূরক বাজেটের ২০টি দাবির বিপরীতে ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব  দেন চারজন সংসদ সদস্য।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপরে আলোচনায় বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মুজিবুল হক বলেন, জনগণের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। পিকে হালদারের মতো লোক সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেল। বড় বড় প্রতিষ্ঠান হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সুদ মওকুফের আবেদন করছে। অন্যদিকে ৫০ হাজার টাকা ঋণের জন্য একজন কৃষককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণখেলাপিরাই মূলত বিদেশে অর্থ পাচারকারী। কারা কানাডা, ইউরোপ, আমেরিকায় বাড়ি করছে, হোটেল করছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এসব ঘটনার প্রতিবাদস্বরূপ তিনি সম্পূরক বাজেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবকৃত ৪৯৫ কোটি টাকা মঞ্জুরি দাবি থেকে ৫০০ টাকা (প্রতীকী) কমানোর প্রস্তাব দেন।

রেলে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি ১৫২৬ কোটি টাকা : রেলমন্ত্রী : ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলওয়ের আয়ের তুলনায় ১ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনে সিলেট-৫ আসনের এমপি মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। যাত্রীবাহী ট্রেনের তুলনায় মালবাহী ট্রেন কম থাকায় রেলের আয় কম হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। সরকারদলীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে যাত্রীবাহী  রেলের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে ২০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া ২৬০টি ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারজ, ৪৫৪টি মিটার গেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ, ৪৬টি ব্রডগেজ রেল ইঞ্জিন এবং ৫০টি মিটার গেজ রেল ইঞ্জিন সংগ্রহের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। গাইবান্ধা-৩ আসনের এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতির এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী জানান, জনবল সংকটের কারণে নলডাঙ্গা রেলস্টেশনটি বন্ধ রয়েছে। দেশে স্টেশন মাস্টারের মঞ্জুরিকৃত ১৯২৯টি পদের মধ্যে ১১১৩টি পদ শূন্য রয়েছে। পয়েন্ট ম্যানের শূন্য পদ রয়েছে ৭৮৩টি। এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলির এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী জানান, দেশে রেলওয়ের মোট ইঞ্জিন রয়েছে ৩০৬টি। এর মধ্যে ২৩৩টি ইঞ্জিন সচল রয়েছে। বন্ধ পাট বস্ত্রকলগুলো পুনরায় চালুর ব্যবস্থা হচ্ছে : দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাট ও বস্ত্র কলগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনে এমপি ফরিদা ইয়াসমিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, ২২টি জুট মিল, ২টি নন জুটমিল ও বিরাষ্ট্রীকৃত মিলসমূহের শর্ত লঙ্ঘিত হওয়ায় টেকব্যাককৃত ৫টি জুটমিলসহ দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তথা বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বর্তমানে ২৯টি মিল রয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণে বস্ত্র কল রয়েছে ২৫টি। সরকারি সিদ্ধান্তে ২০২০ সালের ১ জুলাই বিজেএমসির ২৫টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১৭টি জুট মিল, পরবর্তীতে ২টি নন জুটমিল ও সর্বশেষ টেকব্যাককৃত ১টি মিলসহ ২০টি মিল ইজারার ভিত্তিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালুর সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ১৪টি মিলের লিজচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৬টি মিলের ইজারা কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া ৬টি মিল উৎপাদন শুরু করেছে। অপরদিকে বিটিএমসির ২৫টি বস্ত্রকলের মধ্যে পিপিপির আওতায় পরিচালনার লক্ষ্যে নীতিগত অনুমোদন রয়েছে ১৬টির।

 

 

সর্বশেষ খবর