বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী, নগরবাসীর মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা

শহরের খাল এখন মৃত্যুফাঁদ!

চট্টগ্রাম- ♦ প্রতি বছরই খাল নালায় পড়ে মানুষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ♦ যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না সেবা সংস্থাগুলো

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

শহরের খাল এখন মৃত্যুফাঁদ!

মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম শহরের খাল ও নালাগুলো। নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণহানিও হচ্ছে একের পর এক। গত চার বছরে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা। তবে খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু বা নিখোঁজের তালিকা নেই কোনো সংস্থার কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে মোট ১৬১ কিলোমিটারের ছোট-বড় ৫৭টি খাল আছে এবং ৭৬৫ কিলোমিটার নর্দমা আছে। ক্রমশই এসব নালা ও খালগুলোয় ঘটছে দুর্ঘটনা। ২০২১ সালে নগরের খাল-নালায় পড়ে ডুবে মারা যান পাঁচজন। এ ছাড়া ২০২২ সালে একজন এবং ২০২৩ সালে তিনজন মারা যান। সর্বশেষ চলতি বছরেই নিখোঁজ ও মারা যান চারজন।       

জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকালে চাক্তাই খালে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় দুই শিশু। রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের খোঁজ মেলেনি। গতকাল ভোরে চাক্তাই খালের ১৪ নম্বর গলির মুখে একটি মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তারা এসে শিশুর মৃতদেহটি উদ্ধার করে। আনুমানিক ১২ বছর বয়সি শিশুটির পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনো নিখোঁজ অপর শিশু। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম এ মালেক বলেন, একটি শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। অপর শিশুকে উদ্ধারে অভিযান চলছে।  বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. ফোরকান বলেন, প্রতি বছরই খাল-নালায় পড়ে মানুষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। নিরাপত্তাবেষ্টনীর অভাবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এ ঘটনার নিরসন হওয়া উচিত।  নগর স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, খাল-নালায় পড়ে মানুষ মারা যাওয়া দুঃখজনক।  একই সঙ্গে খাল-নালার পাশের বাসিন্দাদেরও দুর্ঘটনার বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিত। তাতে দুর্ঘটনা কমবে। কিন্তু পরে আরেকটি ঘটনার চাপে আগের ঘটনাটি হারিয়ে যায়। এভাবে চলতে পারে না। এক্ষেত্রে সেবা সংস্থার গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়, সঙ্গে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা বিষয়টাও সামনে আসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জুন ষোলশহর চশমা পাহাড় এলাকায় একটি অটোরিকশা খালে পড়ে নিখোঁজ হয় তিনজন। পরে চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগমের (৬৫) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে পানির তীব্র স্রোতে নালায় পিছলে পড়ে ডুবে যায় সালেহ আহমেদ (৫০) নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। পরে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদ মোড়ে ড্রেনে পড়ে শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া (১৯) নামে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী মারা যান। ৭ ডিসেম্বর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকার খালে পড়ে নিখোঁজ হয় কামাল উদ্দিন (১০) নামের এক শিশু। তিন দিন পর তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় পাশের আরেকটি খাল থেকে। ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা শহরের কালুরঘাট এলাকার ওসমানিয়া খাল থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে।  ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফতেহপুর ইসলামিয়া হাটসংলগ্ন বাদামতলা এলাকায় নালায় পড়ে মৃত্যু হয় কলেজছাত্রী নিপা পালিতের (২০)। ২৭ আগস্ট নগরের আগ্রাবাদের রঙ্গিপাড়ায় ইয়াছিন আরাফাত নামের দেড় বছর বয়সি এক শিশু নিখোঁজ হয়। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর নগরের ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকার খালে নেমে নিখোঁজ হয় আবদুল্লাহ (৫)। একদিন পর আবদুল্লাহর মৃতদেহ পাওয়া যায়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ এপ্রিল সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে তিন বছরের শিশু ওজাইফা মারা যায়। ২৭ মে কোতোয়ালি থানার আছাদগঞ্জ শুঁটকিপল্লী এলাকায় কলাবাগিচা খালে পড়ে মারা যাওয়া আনুমানিক ৩০ বছর বয়সি অজ্ঞাত এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর