শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংসদে আলাউদ্দিন চৌধুরীর তিন প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদে আলাউদ্দিন চৌধুরীর তিন প্রস্তাব

আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতা-কর্মীদের সম্মান জানাতে ও আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের আলোচনায় তিনি বলেন, সংসদে আজ আওয়ামী লীগের যে চেহারা দেখছি, সেটা আওয়ামী লীগের মূল চেহারা নয়। আওয়ামী লীগের মূল চেহারার লোকগুলো আওয়ামী লীগ থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের সম্মান দেওয়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকে চারটি পর্যায় দেখেছি। ১৯৭৫-৮১, ১৯৮১-৯৬, ২০০১-২০০৬ এবং ২০০৭-০৮। এ চারটি পর্যায়ে শেখ হাসিনা রাস্তায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, পিকেটিং করেছেন, অবরোধ ভেঙেছেন। তিনি শুধু লন্ডনে বসে খুনি তারেক রহমানের মতো নির্দেশ দেননি। কর্মসূচি ঘোষণা করেননি। রাজপথে আন্দোলনে থাকায় ২১ বারের মতো শেখ হাসিনার জীবনের ওপর হামলা এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলার পথে দীর্ঘ ৪০ বছরে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যাঁরা হারিয়ে গেছেন, তাঁদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের সময় এসেছে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ১৯৭৫-৮১, ১৯৮১-৯৬, ২০০১-২০০৬ এবং ২০০৭-০৮ সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের ওপর গবেষণার জন্য একটি কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এ চার পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের অফিশিয়ালি শহীদের মর্যাদা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। মাসে অন্তত দুই দিন সারা দেশের দুর্দিনের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করলে খুব ভালো হয়। এ মানুষগুলোর আর কোনো আশা-আকাক্সক্ষা নেই। তাঁরা শেষবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখতে চান। তাঁর মুখ থেকে কথা শুনতে চান। ফেনীর এই সংসদ সদস্য বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার ওপর প্রায় ৫০ বছর ধরে স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর চেপে বসে ছিল। এ এলাকা থেকে বেগম খালেদা জিয়া চারবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েও এ এলাকার উন্নয়নে দৃষ্টিপাত করেননি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তিনি আমাদের এলাকা বুকে ধারণ করেননি বা আমাদের এলাকার প্রতি কোনো প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে ওই এলাকাকে বছরের পর বছর উন্নয়নবঞ্চিত করেছেন। বর্তমানে বেশ কয়েকটি সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ১০০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি পুনরায় চালুর অনুরোধ জানান তিনি। নির্বাচনি এলাকায় তিনটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুরবস্থা তুলে ধরে বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় ডাক্তারদের বারবার পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে, আবার অ্যাটাচমেন্টের নামে তাদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ পদগুলো না হচ্ছে শূন্য, না হচ্ছে পূর্ণ। এ এক আজব ব্যাপার!

বাজেট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। জনবান্ধব বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই সেই বাজেট থেকে জনগণ সুফল পেতে পারে না। আজ (গতকাল) বাংলাদেশ প্রতিদিনে স্বাস্থ্য খাতের ওপর একটি রিপোর্ট বেরিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১০ কোটি টাকার দুটি এমআরআই মেশিন সরবরাহের পর থেকেই নষ্ট অবস্থায় গোডাউনে পড়ে আছে। এমন প্রচুর ঘটনা আছে। এখন গুগলে ক্লিক করলেই প্রতিটি পণ্যের দাম জানতে পারি। কিন্তু আমরা দেখি সেই দামের থেকে তিন-চার গুণ বেশি দিয়ে পণ্য কেনা হচ্ছে। তাই অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই-সরকারের ক্রয়নীতি অর্থাৎ পিপিআর সংশোধনের সময় এসে গেছে। এটি যথাযথভাবে সংশোধন করে সরকারি অর্থের অপচয়ের পথ বন্ধ করা জরুরি। শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পেতে অবসরের পরে দীর্ধদিন পথে পথে ঘুরতে হয়। এটা সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের কারণে সারা দেশে গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকশূন্যতায় ভুগছে। আজ ৬০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। এনটিআরসির মাধ্যমে নিয়োগের বিধান বাতিল করে যুগোপযোগী ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে ফিরিয়ে দেওয়াই যৌক্তিক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর