শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

অস্বাস্থ্যকর খাবারে আসক্ত বয়স্করা

স্থূলতাসহ নানা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা

জিন্নাতুন নূর

অস্বাস্থ্যকর খাবারে আসক্ত বয়স্করা

বাংলাদেশের বয়স্করা ভাজাপোড়া ও চিনিজাতীয় স্নাকস এবং মিষ্টি-চিনিযুক্ত পানীয় খাবারে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। আর এ-জাতীয় অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে বয়স্ক নারী-পুরুষ স্থূল হয়ে যাচ্ছেন। শরীরে বাঁধছে নানা রকম অসংক্রামক রোগ। কিউরিয়াস (পঁৎবঁং) নামক মেডিকেল সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। ‘আনহেলদি ফুড অ্যান্ড সুগার-সুইটেন্ড বেভারেজ কনসাপশন এমোং বাংলাদেশি এলডারলি পিপল অ্যান্ড দেয়ার সোসিওডেমোগ্রাফিক ডিটারমিন্টস : ফাইন্ডিংস ফ্রম এ ন্যাশনালি রিপ্রেজেনটেটিভ ক্রস-সেকশনাল স্টাডি’ শীর্ষক এ গবেষণায় পুষ্টিবিদরা বলছেন, শুধু বয়স্ক নয়, সব বয়সি মানুষের জন্যই এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে তখন যখন দেশের সব বয়সি মানুষের মধ্যেই স্থূলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বয়স হয়ে যাওয়ায় খাবারের স্বাদ কমে যাওয়ায় এবং খাবার বানানোর সক্ষমতা কম থাকায় বয়স্করা এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়। গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, বয়স্ক নারী-পুরুষ আগের তুলনায় বেশি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন ও পানীয় পান করছেন।

সম্প্রতি দেশের বয়স্ক নারী-পুরুষের এ-জাতীয় খাবার গ্রহণের ওপর একটি জরিপ পরিচালিত হয়। এজন্য মোট ২ হাজার ৪৮২ জন পুরুষ ও ২ হাজার ৩৩৫ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। দেশের ৮২ স্থানের গ্রাম, বস্তিবিহীন শহর এবং বস্তি এলাকায় এ জরিপ পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে বয়স্ক পুরুষের মধ্যে ফ্রাইড ¯œ্যাকস খান ৮৮৪ জন (৩১.৫%), চিনিযুক্ত স্ন্যাকস খান ১ হাজার ৬৯৬ জন (৬৬.১%) এবং মিষ্টি-চিনিযুক্ত পানীয় পান করেন ১ হাজার ৯১১ জন (৬৯.৩%)। এর বিপরীতে এক সপ্তাহে বয়স্ক নারীর মধ্যে ফ্রাইড ¯œ্যাকস খান ৫১৫ জন (২০.১%), চিনিযুক্ত ¯œ্যাকস খান ১ হাজার ৩৬৭ জন (৫৩.৯%) এবং মিষ্টি-চিনিযুক্ত পানীয় পান করেন ১ হাজার ১৭১ জন (৩৪.১%)। গ্রামের চেয়ে বস্তি ও বস্তিবিহীন শহরের নারী-পুরুষরা মিষ্টি-চিনিযুক্ত পানীয় বেশি পান করেন। বয়স্ক পুরুষের মধ্যে অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার ফলে ফ্রাইড ¯œ্যাকস, চিনিযুক্ত স্ন্যাকস এবং মিষ্টি-চিনিযুক্ত পানীয় পান করার হার বেশি। একই কারণে প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা মিষ্টি-চিনিযুক্ত পানীয় বেশি পান করেন। বিশেষজ্ঞরা ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে এসব খাবারে তাদের নিরুৎসাহ করতে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় গ্রহণের জন্য সচেতনতামূলক প্রচারের ওপর জোর দিয়েছেন। জানা যায়, ফ্রাইড ¯œ্যাকসের মধ্যে আছে ঘরে এবং দোকানে বানানো পিঁয়াজু, পাকোড়া, শিঙারা, সমুচা, চানাচুর ও চিপস। চিনিযুক্ত ¯œ্যাকসের মধ্যে আছে দুধযুক্ত ডেইরি পণ্য এবং অতিরিক্ত চিনি মেশানো মিষ্টিজাতীয় খাবার। আর মিষ্টিজাতীয় পানীয়র মধ্যে আছে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় যেমন কোল্ড ড্রিংকস, জুস, এনার্জি ড্রিংকস, চকোলেট ড্রিংকস ইত্যাদি। গবেষণাটি ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষের ওপর করা হয়। এতে দেখা যায়, বয়স্ক পুরুষরা নারীদের থেকে বেশি অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করেন। আবার শহরের বাসিন্দা, উচ্চশিক্ষিত, টেলিভিশন দেখা এবং নারীপ্রধান পরিবারগুলোয় অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের হার বেশি। আর শহরের বয়স্করা গ্রামের চেয়ে বেশি অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করেন। শহরের বয়স্ক নারী-পুরুষ গ্রামের চেয়ে বেশি চিনিযুক্ত ¯œ্যাকস গ্রহণ করেন। যেহেতু শহরের অনেক নারী ঘরের বাইরে কাজ করেন, এজন্য তাদের প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের হারও বেশি। অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্রাইড ¯œ্যাকস এবং চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণের ফলে এই নারীদের অতিরিক্ত ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, সচ্ছল পরিবারের বয়স্ক নারীরা চিনিযুক্ত পানীয় বেশি পান করেন। তবে বয়স্ক পুরুষের চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয় গ্রহণের হার কম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশান অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাজাপোড়া ও চিনিজাতীয় খাবারগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশের সব বয়সি মানুষের মধ্যেই স্থূলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ছাড়া মানুষ ব্যায়াম ও শারীরিক কাজকর্মও কম করছে; যা স্থূলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এর সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর খাবার কোম্পানিগুলোর অসম প্রতিযোগিতায় এখন বয়স্করাও এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবারে আসক্ত হয়ে পড়ছেন।’

 

সর্বশেষ খবর