বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কবি অসীম সাহা আর নেই

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

কবি অসীম সাহা আর নেই

‘তবুও যেতেই হবে, মানুষের এই তো নিয়তি আর এই তো সে-গান, সময় হলেই তবে দেহ থেকে উড়ে যাবে পাখির পরান’-এটা অসীম সাহার লেখা কবিতার অংশ। সেই কবি একুশে পদকজয়ী অসীম সাহা মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ছাড়লেন। তাঁর বয়স ছিল ৭৫ বছর। তাঁর মৃত্যুতে সাহিত্যাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, কবি-সাহিত্যিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। আজ সকালে শেষবারের মতো কবির নিথর দেহ আনা হবে তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমিতে। সেখানে মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে কবিকে শেষবিদায় জানাবে সাহিত্যাঙ্গনের মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ। বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘর থেকে কবির মরদেহ বাংলা একাডেমিতে আনা হবে এবং রাখা হবে ১২টা পর্যন্ত। এরপর কবির মরদেহ দেওয়া হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, কবি তাঁর মরদেহ আগেই এ শিক্ষায়তনকে দান করেছেন।

১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনায় মামাবাড়িতে অসীম সাহার জন্ম। তাঁর বাবা প্রয়াত অখিল বন্ধু সাহা, মা প্রয়াত প্রভা রানী সাহা। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পিতৃপুরুষের ভিটে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে। তবে বাবার চাকরিসূত্রে মাদারীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু। সেখানেই উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ১৯৭১ সালের উত্তাল দিনগুলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখালেখি-জীবনের শুরু ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপার মধ্য দিয়ে তাঁর লেখালেখির বিকাশ ঘটে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা সাহিত্যের সব শাখায়ই রেখেছেন নান্দনিকতার ছাপ। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩৫। লেখালেখির পাশাপাশি ৪৮ বছর ধরে তিনি দেশের মূলধারার পত্রিকাগুলোয় সাংবাদিকতাও করছিলেন।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার, রূপসী বাংলা পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ), কলকাতা আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার, আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মারক পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার। তিনি একদা ছিলেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক।

তাঁকে ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

অক্টাভিও পাস ও ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা (অনুবাদ ২০১১), কবর খুঁড়ছে ইমাম (২০১১), প্রেমপদাবলি (২০১১), পুরনো দিনের ঘাসফুল (২০১২) (কবিতা), প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা (১৯৭৬), অগ্নিপুরুষ ডিরোজিও (১৯৯০), উদাসীন দিন (উপন্যাস) (১৯৯২), শ্মশানঘাটের মাটির গল্প (১৯৯৫), কিলের চোটে কাঁঠাল পাকে (২০০২), শেয়ালের ডিগবাজি (২০০৭), হেনরি ডিরোজিও (২০১০) ইত্যাদি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর