শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
বগুড়া

বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা

আধিপত্য বিস্তার, ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি, মাদকের টাকা জোগাড় ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বগুড়ায় বেড়েই চলেছে সামাজিক অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা

আধিপত্য বিস্তার, ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি, মাদকের টাকা জোগাড় ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বগুড়ায় বেড়েই চলেছে সামাজিক অস্থিরতা। এর জেরে ঘটছে খুনের মতো ঘটনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে ৩১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। স্বামীর হাতে স্ত্রী, বন্ধুর হাতে বন্ধু, সর্বশেষ প্রেস্টিজ ইস্যুতে ঘটেছে জোড়া খুনের ঘটনা।

বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, খুন-খারাবির কারণে বগুড়া এখন অসুস্থ নগরীতে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাব আমাদের মধ্যে যেমন পড়ছে, ঠিক পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও পড়বে। তাই আমাদের সন্তানদের পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

র‌্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার (পুলিশ সুপার) মীর মনির হোসেন জানান, সামাজিক অবক্ষয় থেকে বগুড়ায় খুনের ঘটনা বেড়েই চলছে।

একসময়ের শান্তির শহর বগুড়া এখন অনেকটা অশান্তির শহরে পরিণত হয়ে উঠেছে। খুনের শিকার শুধু সাধারণ মানুষই নয়, রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও।

বগুড়া জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী- ২০২১ সালে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৮২টি। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯টি। ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত খুন হয়েছে ৮০ জনের ওপরে। ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত এ সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। শুধু যে সাধারণ মানুষ কিংবা সন্ত্রাসীরা খুন হচ্ছে তা নয়, খুনের তালিকায় যোগ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, কারারক্ষী, আনসার সদস্যও। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৩১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের বেশির ভাগ হয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং কিশোর গ্যাংদের দ্বারা। কোনোভাবেই পুলিশ থামাতে পারছে না চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং কিশোর গ্যাংদের। মাদকের টাকা না পেলে বাবা ও মাও ছাড় পাচ্ছেন না কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাত থেকে। বগুড়া জেলাজুড়ে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। এতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পুলিশ বেশির ভাগ হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার এবং রহস্য উদঘাটনের দাবি করলেও খুন কোনোভাবেই থামছে না।

একসময় বগুড়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ফুলতলায় নিয়মিত ঘটত খুনের ঘটনা। দিনে-রাতে খুনের ঘটনা ঘটত এখানে। কোনো অবস্থাতেই ফুলতলার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই এলাকায় দেদার হতো খুনের বদলে খুন। একজন খুন হলেই বদলা নিতে খুনের ঘটনায় মরিয়া হয়ে উঠত অন্য সন্ত্রাসীরা। খুন আতঙ্কে থাকত এলাকাবাসী। ফুলতলায় পেশাদার খুনি আমিনুর রহমান শাহীন ও মজনু মিয়ার আলাদা সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল। শাহীন ও মজনু দুজনই প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। কিন্তু বর্তমানে খুনের ঘটনা শুধু ফুলতলাই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে।

গত ১৭ জুন বগুড়ায় ঈদুল আজহার দিন রাতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এদিন রাতে শহরের নিশিন্দারা চকরপাড়ায় মোহাম্মদ শরীফ ও তার মামাতো ভাই মোহাম্মদ রোমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শরীফের মা হেনা বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে ৮ জুন পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ২৯ মামলার আসামি বিরাজুল ইসলাম ব্রাজিলকে হত্যা করা হয়। গত ২ জুন বগুড়া শহরের বনানী এলাকায় শুভেচ্ছা নামের একটি আবাসিক হোটেলে স্ত্রী আশামনি (২০) ও এক বছর বয়সি শিশু সন্তান আবদুল্লাহ আল রাফিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন সেনাসদস্য আজিজুল হক।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর