রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢাকায় ফিরতেও ভোগান্তি

♦ ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে ভোগান্তি ♦ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ধীরগতি ♦ ট্রাক কিংবা পিকআপে ফিরছেন অনেকেই ♦ ট্রেনেও উপচে পড়া ভিড়

ওয়াজেদ হীরা

ঢাকায় ফিরতেও ভোগান্তি

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আকতারুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটিয়ে দুর্ভোগ সহ্য করে ফিরেছেন কর্মস্থল ঢাকায়। উত্তরবঙ্গের যে গাড়ি ৮-৯ ঘণ্টার ঢাকায় আসার কথা সেই পথ পাড়ি দিয়েছেন ১৯ ঘণ্টায়। আকতারুজ্জামানের মতো হাজারো যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথের দুর্ভোগ সয়ে ফিরছেন শহরে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে যারা ঢাকামুখী হচ্ছেন প্রত্যেকেরই কমপক্ষে সময় লাগছে ১৫ ঘণ্টা। এ ছাড়া অনেকেই ঢাকায় প্রবেশমুখে এসে পড়তে হচ্ছে দীর্ঘ যানজটে। ঈদযাত্রায় ঢাকায় ফিরতেও ধীর গতির ভোগান্তির মুখোমুখি হয়েছেন।

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে গত বুধবার অফিস-আদালত খুললেও অনেকেই ঢাকায় ফেরেননি। অতিরিক্ত আরও দুই দিন ছুটি নেন। এতে করে আজ রবিবার থেকে পুরোদমে ব্যস্ত হবে ঢাকা। তাই শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ছিল পথে পথে মানুষের ফেরার অপেক্ষা। ঢাকায় ফিরতে পরেছেন যানজটে। সময়মতো গাড়ি না পাওয়া, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তো আছেই।

অন্যান্য সড়কের চেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা মানুষের। ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। যাওয়ার সময়ও উত্তরের পথে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। ফেরার পথেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। আকতারুজ্জামান বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার গাড়ি দুই ঘণ্টা পর ছেড়েছে ৮টায়। সড়কে এত যানজট, যে কারণে আমাদের বহনকারী বুড়িমারি এক্সপ্রেস ঢাকার গাবতলী পৌঁছায় শনিবার বিকাল ৩টায়। ১৯ ঘণ্টায় এসেছি। সড়কে লোকাল গাড়ি এলোমেলো করে দূরপাল্লার গাড়ি যেতে জ্যাম লাগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরের জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম থেকে আসা গাড়িগুলো রাত আর দিন দুই সময়েই যানজটে পড়েছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের। এ ছাড়া বগুড়া, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট জেলার যাত্রীরাও ধীরগতিতে ফিরেছেন কর্মস্থলে। উত্তরের সড়ক ব্যবহার করে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা জানান, এলোমেলোভাবে লোকাল গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা এবং পুলিশের তদারকি কম থাকার কারণে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভোগান্তি হচ্ছে, যানজট তৈরি হচ্ছে মুহূর্তেই।

রংপুর থেকে নাবিল পরিবহনে ভোগান্তি নিয়ে ১২ ঘণ্টায় ঢাকায় ফিরেছেন মো. আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সাধারণত ৬-৭ ঘণ্টা লাগে, তবে যারা সরাসরি ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে এসেছেন তাদের ১৬-১৭ ঘণ্টা লেগেছে। ড্রাইভার আন্তজেলা সড়ক ব্যবহার করেছেন বলে একটু কম লেগেছে। লালমনিরহাট থেকে আসা যাত্রী সিরাজুল হায়দার কালাম বলেন, রংপুরের পীরগঞ্জ, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী এবং সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু এলাকায় কয়েক দফায় যানজটে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় আমিনবাজার এসেও যানজটে পড়ে গাড়ি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে বিশেষ করে নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা থেকে ফেরা যাত্রীরা তেমন কোনো ভোগান্তিতে পড়েননি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও তেমন যানজট ছিল না। তবে যারা শেরপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর থেকে এসেছেন তারা ময়মনসিংহ এসে একটু ধীর গতিতে পড়েন, তবে ময়মনসিংহ থেকে যারা ঢাকা ফেরেন তারা পথে তেমন কোনো ভোগান্তি পাননি।

ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে ভোগান্তি : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জেলার বাসিন্দা যারা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় ফিরেছেন তাদের বেশির ভাগই পোস্তগোলা ব্রিজে এসে পড়েছেন যানজটের ভোগান্তিতে। দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়েছে ঢাকার প্রবেশপথ ধোলাইপাড়েও। এ ছাড়া উত্তবঙ্গের বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েন সাভার, জিরাবো, আমিনবাজার এলাকায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যেসব গাড়ি ফ্লাইওভার ব্যবহার করেছে তাদের খুব একটা সমস্যা ছিল না। তবে নিচ দিয়ে যারা যাতায়াত করেছেন তারা আবদুল্লাপুর-টঙ্গী এলাকায় ভোগান্তিতে পড়েন। এদিকে শুক্রবারের তুলনায় গতকাল রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা ফেরি অথবা লঞ্চে পাটুরিয়া যেতে পারছেন। 

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ধীরগতি : টাঙ্গাইলে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব টোলপ্লাজা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। গতকাল কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কখনো ভারী বৃষ্টির ফলে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

ট্রাক কিংবা পিকআপে ফিরছেন অনেকেই : অনেকেই বাসে উঠতে না পেরে ট্রাক বা পিকআপে করে কর্মস্থলে ফিরতে দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দৃশ্য ছিল অহরহ। পোশাক শ্রমিকরা দলবদ্ধভাবে পিকআপ বা ট্রাক ভাড়া করে গন্তব্যে ফিরছেন বলে জানা যায়।

ট্রেনেও উপচে পড়া ভিড় : ঈদের ছুটি শেষে নিরাপদ বাহন হিসেবে অনেকেই ফিরছেন ট্রেনে উঠেও অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে স্বস্তি পায়নি। ঢাকায় ফেরা প্রতিটি ট্রেনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেকে টিকিট না পেয়ে দাঁড়িয়েই ঢাকায় ফেরেন। গতকাল ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রেনেই গাদাগাদি করে ফিরছে মানুষ। যাত্রীরা জানান, প্রতিটি স্টেশনে মানুষ আর মানুষ ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকে ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব করেছে স্টেশনে পৌঁছাতে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর