রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
♦ বন্যায় পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঈদেও পর্যটক শূন্য ♦ অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি

সিলেটের পর্যটন ব্যবসায় ধস

সিলেটের জাফলং, লালাখাল, সাদাপাথর, পান্তুমাই, বিছানাকান্দি ও রাতারগুলসহ জেলার কোনো পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা যাননি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের পর্যটন ব্যবসায় ধস

ঈদ কিংবা সরকারি লম্বা ছুটি হলেই সিলেটে নামে পর্যটকদের ঢল। বিশেষ করে দুই ঈদে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে সিলেটে। প্রকৃতির সান্নিধ্য ও সৌন্দর্য উপভোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। এ সময় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা খাতগুলো হয়ে ওঠে চাঙা। পর্যটকদের ঘিরে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, রেন্ট এ কার, নৌকা ও স্থানীয় কুটিরশিল্পের ব্যবসাও জমজমাট হয়ে ওঠে। এবার ঈদুল আজহায় ব্যবসা নিয়ে এমনই স্বপ্ন দেখেছিলেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সর্বনাশা বন্যায় তাদের আশায় গুড়েবালি হয়েছে। বন্যার কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ফলে পর্যটকরাও সিলেটমুখী হননি।

সিলেটে হোটেল মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এ টি এম শোয়েব জানান, বন্যার কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় পর্যটকরা সিলেটমুখী হননি। তাই হোটেলগুলো পুরোই ফাঁকা ছিল। পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত সব ব্যবসায় অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা পুষিয়ে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

এবার ঈদুল আজহায় প্রায় এক সপ্তাহ পর্যটক সমাগমের আশা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনাও সাজিয়েছিলেন। অনেক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট সংস্কার করে পর্যটক আকর্ষণের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন মালিকরা। কিন্তু ঈদের আগে সিলেট জেলাজুড়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলে তাদের মাথায় হাত পড়ে। বন্যার কারণে ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সিলেটের সবকটি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে। ফলে ঈদের ছুটিতে সিলেটে পর্যটকরা সিলেট বেড়াতে আসেননি। এতে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের জাফলং, লালাখাল, সাদাপাথর, পান্তুমাই, বিছানাকান্দি ও রাতারগুলসহ জেলার কোনো পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা যাননি। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটকবাহী নৌকা চলাচলও বন্ধ রয়েছে। পর্যটক না আসায় একদিকে যেমনি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো খালি পড়ে আছে তেমনি ব্যবসা হয়নি রেন্ট এ কারের। যাত্রী না পেয়ে অনেক প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস সারাদিন স্ট্যান্ডে বসে থাকতে দেখা গেছে। অথচ ঈদ কিংবা ৪-৫ দিনের ছুটি মিললে সিলেটে পর্যটকদের ঢল নামত। এই সময় হোটেলে সিট পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াত। অনেকে আগে বুকিং দিয়ে না আসায় হোটেলে রুম না পেয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে রাত কাটাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ছুটির দিনে পর্যটক সমাগম বেশি হওয়ায় প্রাইভেট গাড়ির ভাড়াও বেশি হাঁকাতেন চালকরা।

তাওসিম রেন্ট এ কারের স্বত্বাধিকারী মুহিত রাজা চৌধুরী জানান, অন্যবার ঈদের ছুটিতে তার রেন্ট এ কারের আওতাধীন ১২টি গাড়ির সবগুলো ব্যস্ত থাকত। কোনো কোনো গাড়ি দিনে দুই ট্রিপও দিত। কিন্তু এবার বন্যার কারণে ঈদের ছুটিতে পর্যটক না আসায় চালকরা অলস সময় কাটিয়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর