সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাদক নির্মূলে ক্রাশ প্রোগ্রাম

♦ ৩১টি ওয়ার্ডকে ভাগাভাগি করে মাদকব্যবসা ♦ পাড়া-মহল্লায় কয়েক স্তরের গ্যাং

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনা নগরে ব্যাপকভাবে মাদকের বিস্তার ঘটেছে। মাদকের গডফাদাররা নগরে ৩১টি ওয়ার্ডকে ভাগাভাগি করে মাদকব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অভিযানে প্রতিদিনই মাদকসহ বিক্রেতারা গ্রেফতার হলেও নেপথ্যে গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ কারণে এবার মাদক নির্মূলে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। ওয়ার্ডভিত্তিক সুধীসমাজকে সঙ্গে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ২৮ জুন থেকে আনুষ্ঠানিক ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরুর কথা জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জানা যায়, মাদক বিক্রির জন্য পাড়া-মহল্লায় কয়েক স্তরের গ্যাং তৈরি করেছে মাদকব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে ১৫-১৭ বছর বয়সী বখাটেদের দিয়ে সরাসরি মাদক বিক্রি করা হয়। এদের প্রত্যেকের হাতেই থাকে দামি মোবাইল সেট। যা মাদকব্যবসায়ীরা সরবরাহ করে থাকে। এ ছাড়া দিনশেষে এদেরকে বিনামূল্যে মাদক সেবন ও নগদ টাকা দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট স্পটগুলোতে কমবয়সী বিক্রেতারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়। এদের নিরাপত্তায় ২৫-৩৫ বছর বয়সী উঠতি মস্তানদের একটি গ্রুপ নিয়মিত ওই এলাকায় মহড়া দেয়। তাদের ‘বড় ভাই’ (নিয়ন্ত্রণকারী) হিসেবে থাকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছাত্র বা যুব সংগঠনের কোনো নেতা। পুরো নেটওয়ার্ক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল বা প্রাইভেট কারে করে বিভিন্ন পয়েন্টে মাদক সরবরাহ করা হয়। অভাবগ্রস্ত পরিবারের সন্তান, ঝরে পড়া স্কুলছাত্র, তরুণী ও নারীরাও মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। পুলিশের অভিযানে ইয়াবা, গাঁজাসহ কয়েকটি চালান আটকের ঘটনায় এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে মাদকের বেচাকেনায় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে ঘটছে হত্যাকান্ড। সেই সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, চুরি চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে নগরবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। এসব ঘটনায় দৌলতপুর, খালিশপুর ও খানজাহান আলী থানা পুলিশ কর্মকর্তা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা, স্থানীয় কাউন্সিলর, সংসদ সদস্য ও সুধীসমাজকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে মাদকবিরোধী ক্রাশ প্রোগ্রামের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ২৮ জুন থেকে ক্রাশ প্রোগ্রামে যাব। ঘরে ঘরে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। বিভিন্ন বিটগুলোতে পুলিশের কর্মকর্তাসহ কমিউনিটি সভা করা হবে। গণপ্রতিরোধ করে তুললে মাদকের ব্যবসা থাকবে না। সেই কাজটাই করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক সমাজপতি জনপ্রতিনিধিসহ সব মানুষকে নিয়ে বসব। কোন কোন পয়েন্টে কারা মাদক বিক্রি করে চিহ্নিত করা হবে। এলাকার মানুষ এসব জানে, পুলিশের কাছেও মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তথ্য আছে। সবাই এক জায়গায় হয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম করা হবে। একই সঙ্গে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলবে। তবে ওয়ার্ডভিত্তিক মাদকবিরোধী সভা ধাপে ধাপে করা হবে। এতে মাদক সংশ্লিষ্টদের গতিবিধির ওপর নজরদারি করা যাবে।

 

 

সর্বশেষ খবর