শিরোনাম
বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

শেষ হতে যাচ্ছে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

শেষ হতে যাচ্ছে ভোগান্তি

৯৪ বছর আগে কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হতে আরও এক মাস লাগবে। গত বছরের ১ আগস্ট সংস্কারকাজ শুরু হয়। এর পর থেকে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রথম দফায় গত বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেতুর সংস্কারকাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শে ৪৩ কোটি টাকায় সংস্কার করা হচ্ছে কালুরঘাট সেতুটি। বর্তমানে সংস্কারের ৭৫ শতাংশ শেষ। কার্পেটিংয়ের কাজ এখনো ২৫ শতাংশ বাকি। এজন্য লাগবে এক মাস। কোরবানির ঈদের আগে পথচারীদের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে না দেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে। কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয় ১৯৩১ সালে। কালুরঘাট সেতুর ফোকালপারসন প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সেতুর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। কার্পেটিংয়ের কাজও শেষ। এখন চলছে শেষ সময়ের কাজ। কাজ শেষ হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা চলবে। এর পরই চূড়ান্তরূপে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এটি চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হবে।’

জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে সেতুটির সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। সংস্কারের প্রথম ধাপ শেষ করে গত বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যটননগর কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো যাত্রীবাহী কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং পরে পর্যটক এক্সপ্রেস চলাচল শুরু করে। এর আগে ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে দুটি আন্তনগর ট্রেন, একটি স্পেশাল ট্রেন এবং দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেলবাহী ট্রেন চলাচল করছে। সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধে দুই প্রান্তে বসানো হবে উচ্চতা প্রতিবন্ধক। এসব কাজ শেষ হলে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষানিরীক্ষা করবে। কালুরঘাট সেতু দিয়ে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়ার একটি অংশের মানুষ চট্টগ্রাম নগরে আসা-যাওয়া করে। সেতু দিয়ে অটোরিকশা, টেম্পো, ছোট পিকআপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস চলাচল করত। এখন ফেরি দিয়ে পারাপার হয় মানুষ। প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার মানুষ নদী পার হয়। সেতু দিয়ে ট্রেনও চলাচল করে।

বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা মনে করেন, এবার বিদ্যমান পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ রাখা হয়েছে। এরপর ওই কংক্রিট ঢালাইয়ের ওপর পিচ দিয়ে সড়কপথ নির্মাণ করা হয়। এতে সড়ক ও রেল পথ দুটিই আগের চেয়ে শক্ত অবয়ব পায়। তাই সংস্কারের পর বর্ষা মৌসুম কিংবা কুয়াশাজনিত পানি না জমে কংক্রিট ঢালাইয়ের অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ সিস্টেম দিয়ে নদীতে পড়লে রেলট্র্যাক, ক্লিপ ও সেতুর ইস্পাতের পাটাতন ক্ষয় হবে না। বিশেষ প্রযুক্তি ও বুয়েটের পরামর্শে নতুন করে বিদ্যমান পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে সড়ক ও রেল পথ উভয়ই আগের চেয়ে শক্ত থাকবে। মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুটি দীর্ঘ সময় ব্যবহারযোগ্য রাখা যাবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে রেললাইন দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। পরে সেটি আবারও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করত। গত বছরের ১ আগস্ট আবারও সেতুটির সংস্কারকাজ শুরু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর