পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ইউরোপে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ট্রেন যায়, তাতে কি তাদের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয়েছে? বাংলাদেশ-ভারতের রেলযোগাযোগ রয়েছে, সেটি আরও বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা চলছে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফল নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের পার্থক্য না বুঝে না পড়েই মন্তব্য করছেন। কারণে-অকারণে সরকারের বিরোধিতা করাই তাদের কাজ। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেনি। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত যেভাবে সহায়তা করেছে, তাদের সৈনিকরা যেভাবে জীবন দিয়েছে, আমাদের প্রায় এক কোটি মানুষকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে, তাতে তাদের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তা অবিচ্ছেদ্য। শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। যার ফলে আমরা নেপাল থেকে ভারতের ওপর দিয়ে ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে পারছি। ভুটানের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। সম্পর্কের কারণেই এ বছর কোরবানির আগে ভারত বাংলাদেশে পিঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে।
ভারতের সঙ্গে ‘কানেকটিভিটি’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের নানা অঞ্চলের যোগাযোগ বহুদিন ধরে। ১৯৬৫ সালের পরে অনেক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা রেল যোগাযোগ বিদ্যমান। ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানসহ আঞ্চলিক রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে কাজ চলছে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে বিরোধ প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা স্মারক করে। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমি মনে করি, এ প্রশ্নটা ভারত সরকারকে করলে ভালো হয়। তারাই এটার সঠিক উত্তর দিতে পারবে। কারণ, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুইডেনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, প্রযুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এ ছাড়া বিকালে ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর উত্তর কার্যক্রম, চীনে আসন্ন দ্বিপক্ষীয় সফরের প্রস্তুতিসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সুসমন্বয়, দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম তদারকি, প্রবাসী সেবার মানবৃদ্ধি, মিশনগুলোর ট্রেড টার্গেট বাস্তবায়ন ও কার্যক্রম ইনস্পেকটর জেনারেল অব মিশনসের মাধ্যমে পরিদর্শনসহ মন্ত্রণালয় ও এর মিশনসমূহের নানা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়।
