শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

নগরীর ৭ হাজার ভবন ৪৫ মার্কেট ও ১০ বাজার চরম ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

চট্টগ্রাম নগরীর অন্তত ৭ হাজার ভবন, ৪৫ মার্কেট ও ১০টি বড় বাজার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় তিন স্তরের নিরাপত্তা প্রস্তুতির মধ্যে কিছু ভবনে দুই স্তর থাকলেও তৃতীয় স্তরের প্রস্তুতি কোথাও নেই। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের মোহাম্মদিয়া মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে তিনজনের মৃত্যুর পর অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসছে।

নগরীতে ফায়ার সার্ভিসের ২০১৮ সালে করা জরিপ অনুযায়ী- শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর ৯৭ শতাংশ অগ্নিঝুঁকিতে আছে। ৯৩ শতাংশের অগ্নিনিরাপত্তার অনাপত্তিপত্র নেই। ৯৭ শতাংশের নেই ছাড়পত্র। সবচেয়ে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে শপিং সেন্টার, বিপণিবিতান, বাজার ও বস্তি এলাকা। জরিপে ৪৩টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ জরিপের পর নোটিস দেওয়া হলেও বেশির ভাগ মালিক পাত্তা দেননি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্তারা বলছেন, অতীতে ভবন নির্মাণের সময় অগ্নিঝুঁকির বিষয়টি আমলে নেওয়া হতো না। ২০১০ সালের পর তৈরি হওয়া বেশির ভাগ ভবনে অন্তত দুই স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। আধুনিক কিছু ভবনে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থাও আছে। এগুলোতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার, ছোট জলাধার, সিঁড়ি রাখা হলেও ব্যয় কমাতে পানির পাম্প, প্রশস্ত একাধিক সিঁড়ি, বড় জলাধার রাখা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- বস্তি এলাকা, বিভিন্ন বিপণিবিতান, বাজার, গুদামগুলোতে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রিয়াজউদ্দিন বাজারের একটি মার্কেটে আগুন লাগে।

 গত মার্চে বাকলিয়ায় নির্মাণাধীন হিমাগারে, ফেব্রুয়ারিতে আমতল এলাকার বহুতল ভবনে আগুন লাগে। সে সময় জহুর হকার মার্কেটেও আগুন লাগে। এর আগে চলতি বছরের শুরুতেও একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, যেসব ভবনে আগুন লাগে- ঘনবসতি, সরু সড়ক-গলির কারণে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারে না। রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার মার্কেটসহ বেশকিছু বাজারে এক একটি মার্কেটে শত শত দোকান। বড় অগ্নিকাণ্ডে এখানে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। গত বৃহস্পতিবার আগুন লাগা রিয়াজউদ্দিন বাজারে হাজারের বেশি ছোট-বড় মার্কেট ও হাজার হাজার দোকান রয়েছে। ভিতরের রাস্তাগুলো খুবই সরু। আশপাশে জলাধার নেই। এখানে বড় অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ বাজারে প্রায়ই আগুন লাগে। খাতুনগঞ্জ, টেরিবাজার, তামাককুণ্ডী লেন, স্বজন সুপার মার্কেট, চাক্তাই চালপট্টিসহ অন্তত ১০টি বাজার চরম ঝুঁকিতে আছে। বস্তি এলাকা এবং ৪৫টির মতো বিপণিবিতানেরও একই অবস্থা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক বলেন, সারা বছর রুটিন কাজ হয়। নিয়মিত নোটিস দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভবন মালিকরা ব্যয় কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন না। বাজারগুলোতে বেশির ভাগ পুরনো ভবন থাকায় সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা মুশকিল।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, এক তলায় মার্কেট, অন্য তলায় রেস্টুরেন্ট, কিছু ফ্লোরে লোকজন থাকছে- এমন ভবনে ঝুঁকি বেশি। পুরনো ভবনের বেশির ভাগে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অপ্রতুল। জলাধারের সংখ্যা কম। গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই। এসব ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সতর্ক করছে ফায়ার সার্ভিস।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর