শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বুঙ্গার চিনির রহস্যময় ক্রেতা

♦ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ♦ বুঙ্গার খ্যাত চিনির নিলাম হলো ১৪২ টাকায়

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বুঙ্গার চিনির রহস্যময় ক্রেতা

সিলেটে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। পাইকারি বাজারে ১০৪ টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জব্দ করা চিনি সরকারি নিলামে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৪২ টাকা পর্যন্ত। নিলামে ‘বুঙ্গার’ চিনি হিসেবে পরিচিত ভারতীয় চিনির এই ক্রেতাদের নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় চিনির ক্রেতারা বলছেন, মূলত সিন্ডিকেট ভাঙতেই তারা নিলামে অংশ নিয়েছিলেন। ব্যবসায়িকভাবে লোকসান গুনলেও তারা সিন্ডিকেট ভাঙতে সক্ষম হয়েছেন। তবে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারি নিলামের কাগজপত্র চোরাকারবারিদের কাছে খুবই মূল্যবান। ‘বুঙ্গার’ চিনি নিরাপদে পরিবহনের জন্য নিলামের এই কাগজ ব্যবহার করে থাকেন চোরাকারবারিরা। এ জন্য বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দিয়ে অনেকে নিলামে চিনি কিনে থাকেন।

জানা গেছে, গেল কয়েক মাস ধরে সিলেটে প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় চিনির চালান জব্দ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় চালান জব্দ হয় গত ৬ মে। একসঙ্গে জব্দ হয় ১৪ ট্রাক চিনি। ওই ১৪ ট্রাকসহ বিভিন্ন সময় জব্দ করা ভারতীয় চিনি গত বুধবার সরকারিভাবে নিলাম হয়। এ সময় সরগরম হয়ে ওঠে নিলামস্থল সিলেট আদালতপাড়া। নিলাম কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক উম্মে হাবিবা। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১৪ ট্রাক চিনি সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটসহ ১৩৫ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেন কালিঘাটের চাল ব্যবসায়ী রুহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গিয়াস মিয়া। অতিরিক্ত দামে চিনি ক্রয় প্রসঙ্গে জানতে গতকাল বিকালে ফোন দেওয়া হলে গিয়াস মিয়ার ফোন রিসিভ করেন তার দোকানের কর্মকর্তা বাদল বাবু। গিয়াস মিয়া মোবাইল ফোন দোকানে রেখে বাইরে গেছেন বলে জানান তিনি।

একই দিন বিমানবন্দর থানায় জব্দ করা ৬ টন চিনি নিলামে ক্রয় করেন ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ছৈদেরগাঁওর বাসিন্দা আশরাফুর রহমান চৌধুরী। ভ্যাটসহ তার ক্রয় করা চিনির মূল্য পড়ে ১৪২ টাকা।

আশরাফুর রহমান চৌধুরী জানান, সবসময় নিলামে একটি সিন্ডিকেট কম মূল্যে জিনিসপত্র ক্রয় করে থাকে। ওই সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্দেশ্যে তিনি নিলামে অংশ নিয়েছিলেন। নিলামে অংশগ্রহণকারী কেউ নিজেদের প্রভাবশালী, কেউ রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। তাই ‘জোশের ঠেলায়’ তিনি বাড়তি মূল্যে নিলামে চিনি ক্রয় করেছেন। দক্ষিণ সুরমা থানার জব্দ করা দুই টন চিনি নিলামে ক্রয় করেন যুবলীগ নেতা ফয়সল আজাদ খান। ভ্যাটসহ তার ক্রয় করা চিনির মূল্য পড়েছে ১২৮ টাকা।

বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চিনি ক্রয়ের ব্যাপারে ফয়সল আজাদ খানেরও একই বক্তব্য, সিন্ডিকেট ভাঙতেই তিনি নিলামে অংশ নিয়ে বাড়তি মূল্যে চিনি কিনেছেন। তিনি বলেন, লাভ-ক্ষতির হিসেব করিনি। সিন্ডিকেট করে স্বল্পমূল্যে যারা চিনি ক্রয় করতে চেয়েছিল তাদের মিশন ব্যর্থ করতে চেয়েছি।

সূত্র জানায়, চিনির অধিক মূল্য দিয়ে কেনার নেপথ্য কারণ নিলামের কাগজ। এই কাগজ ব্যবহার হয় চোরাচালানে। সীমান্ত পেরিয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ঢোকে চোরাই চিনির চালান। সেই চালান ঘাটে ঘাটে ধরে পুলিশ। চালান ছাড়াতে ভিন্ন কৌশল হিসেবে নিলামের কাগজ চোরাকারবারিরা রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করেন।

সর্বশেষ খবর