সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সীমান্ত গলিয়ে দেদার আসছে মাদক

উত্তরের বিভিন্ন সীমান্তের ওপারে শতাধিক কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে ফেনসিডিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

সীমান্ত গলিয়ে দেদার আসছে মাদক

উত্তরাঞ্চলের ভারতীয় বিভিন্ন সীমান্তের ওপারে শতাধিক ফেনসিডিলের কারখানায় প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে কয়েক লাখ বোতল ফেনসিডিল। এ ফেনসিডিল উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত গলিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। সরকারিভাবে ভারতের কাছে মাদক বন্ধে অনুরোধ জানানোর পরও বন্ধ হয়নি ভারতের অভ্যন্তরে মাদক উৎপাদন। এ ছাড়া বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের নিকট অনুরোধ করা হলেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। গত পাঁচ বছরে উত্তরাঞ্চলে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় পাঁচ লাখের ওপরে ফেনসিডিলের বোতল ও ৪ শতাধিক পাচারকারীকে গ্রেফতার করলেও থেমে নেই ফেনসিডিলের রমরমা ব্যবসা। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অভিভাবকরা। ফলে এ অঞ্চলে আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে ফেনসিডিল আসক্তের সংখ্যা। সূত্রমতে উত্তরাঞ্চলে প্রতিদিন ৫০ হাজার বোতল ফেনসিডিল সেবন করছে মাদকসেবীরা। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাচার হচ্ছে আরও ৫০ হাজার বোতল। সূত্রমতে, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন সীমান্তের ওপারে শতাধিক ফেনসিডিল তৈরির কারখানা কুটির শিল্পের মতো গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ ফেনসিডিলের বোতল বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ  ফেনসিডিলের কারখানাগুলোর বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফ পর্যায়ে বিভিন্ন সময় ফ্লাগ মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলেও মাদক প্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না। কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় বিএসএফ ও পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে এই ফেনসিডিলের কারখানাগুলো চলছে। তাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ফেনসিডিলের বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। বিজিবি, পুলিশ র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েও ফেনসিডিল বিক্রি রোধ করতে পারছে না। দেখা গেছে, নেশার টাকা জোগাড় করতে উঠতি বয়সের যুবকেরা বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিও অবনতি ঘটছে। কয়েক বছর আগে সীমান্ত এলাকায় মাদক উদ্ধারে ডগ স্কোয়ার্ড গঠন করা হয়েছিল। সূত্র মতে, শুধু রংপুরে ফেনসিডিল আসক্তির সংখ্যা ১৫ হাজারে ওপরে। এর মধ্যে ১০ শতংশের ওপরে নারী। প্রতিদিন রংপুর শহর থেকে গঙ্গাচড়া ও হারাগাছা থেকে   মোটরসাইকেল আরোহী যুবক ফেনসিডিল ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন মাদক পয়েন্টে যাচ্ছে। সেখানে তারা সেবনও করছে আবার ফেরার পথে দু-চার বোতল বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে। এভাবেই উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলা সদরের হাজার হাজার যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে শহরতলির বাইরে মাদক বিক্রির পয়েন্টে গিয়ে মাদক সেবন করছে আবার বহনও করছেন। বেশ কয়েকজন মাদকসেবীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে সীমান্তের ওপারে ফেনসিডিল তৈরির কারখানা বন্ধ করতে বিএসএফকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হওয়া জরুরি। অভিভাবকরা আরও জানান, এ অঞ্চলে ফেনসিডিল সহজ লভ্য হওয়ায় খুব সহজেই তা যুবকদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে তারা দিন দিন বিপথগামী হয়ে পড়ছে। ফেনসিডিলের শক্তিশালী সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করতে না পারলে এ অঞ্চলে মাদকের ভয়াবহতা আরও বেড়ে যাবে। রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন বলেন দেশের অভ্যন্তরে মাদক প্রতিরোধে পুলিশ জিরো টলারেন্স ভূমিকা পালন করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর