বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধ সময়ে মৎস্য আহরণ

সন্ধ্যা নামতেই জমজমাট চট্টগ্রামের পাঁচ ঘাট

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সময় মানছেন না চট্টগ্রামের জেলেরা। নগরীর পাঁচটি ঘাট থেকে প্রতি রাতেই মাছ আহরণে সাগরে যাচ্ছেন তারা। এসবের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে স্থানীয় জেলে সর্দার ও তাদের আর্থিক ঋণ দেওয়া দাদন মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাকে ম্যানেজের মাধ্যমে নির্ধারিত ২৩ জুলাইয়ের আগেই জেলেরা সাগরে যেতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরে যাওয়া জেলের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। এই কাজের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও জড়িত রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় আহরণ করা মাছ চোরাই পথে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার নগরীর আকমল আলী ঘাট এলাকা থেকে ৫০০ কেজি সামুদ্রিক মাছ জব্দ করেছে জেলা মৎস্য অধিদফতর ও কোস্টগার্ড। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিনই কোস্টগার্ড ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানে মাছ, বোট জব্দ করছি। আইন অমান্যকারীদের জরিমানা করা হয়েছে। মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও উৎপাদনের স্বার্থে নিষিদ্ধ সময়ের শেষ দিন পর্যন্ত অভিযান কার্যক্রম জোরদার রাখা হবে। এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় চললেও সন্ধ্যা থেকে নগরীর পাঁচটি ঘাট জমজমাট হয়ে ওঠে। ঘাটগুলো হলো- পাহাড়তলী থানাধীন রাশমণি ঘাট, হালিশহর থানাধীন ১৬ নম্বর ঘাট, বন্দর থানাধীন আনন্দবাজার ঘাট, ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী ঘাট ও পতেঙ্গা থানাধীন মুসলিমাবাদ ঘাট। প্রতি রাতে এসব ঘাট থেকে মাছ আহরণের উদ্দেশ্যে জেলেরা সাগরে যাচ্ছেন। ফিরে আসছেন মাছ নিয়ে। প্রতিটি ঘাটে জেলেদের দাদন দেওয়া ব্যক্তি এবং জেলে সর্দাররা এই কাজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারাই স্থানীয় থানা পুলিশ এবং সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করছেন। নগরীর পাঁচটি ঘাটে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা হলেন- রাসমণি ঘাটের জেলে সর্দার কেলন দাশ, ইউসুপ, মান্নান ও আক্তার হোসেন। ১৬ নম্বর ঘাটের নেতৃত্বে রয়েছেন, বাপ্পি ওরফে ইলিশ বাপ্পি, তছলিম ও আলাউদ্দিন। বাপ্পি ও তার সহযোগীরা আনন্দবাজার ঘাটও নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ ছাড়া আকমল আলী ঘাটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন দুলাল, বারেক ও আলী। মুসলিমাবাদ ঘাটে রয়েছেন মোস্তফা, আনোয়ার ও আবদুল্লাহ।

সূত্র জানায়, সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও সংরক্ষণে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য সাগরে সব ধরনের মাছধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত ২০ মে থেকে তা কার্যকর হয়েছে। এ ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নৌযান দিয়ে যে কোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ সময় সমুদ্রযাত্রার প্রবেশপথগুলোতে মনিটরিং জোরদারসহ মৎস্য নৌযানের সমুদ্রযাত্রা শতভাগ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

সমুদ্রে কোনো প্রকার নৌযান দিয়ে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ নৌ পুলিশ এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা চেয়ে যথাক্রমে জননিরাপত্তা বিভাগে ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালীন চট্টগ্রামের ৫০ হাজার ৮৩১ জন জেলেকে খাদ্যসহায়তা হিসেবে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব পরিবার ৬৫ দিনে ৮৬ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি ও পরবর্তী ধাপে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে আর্থিক অনটনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরতে সাগরে পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ জেলেদের।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর