শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

চার বছর বন্ধ ছয় চিনিকল

♦ সংশ্লিষ্টদের কান্না শোনার কেউ নেই ♦ হাতেগোনা কয়েকজন সরকারি সম্পদ পাহারা দিচ্ছেন ♦ রাতে সৃষ্টি হয় ভূতুড়ে পরিবেশ

নজরুল মৃধা, রংপুর

চার বছর বন্ধ ছয় চিনিকল

রংপুরের শ্যামপুর, পাবনা, পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে চার বছরের বেশি সময় ধরে। এসব চিনিকলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কান্না শোনার কেউ নেই। হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী শত শত কোটি টাকার সরকারি সম্পদ পাহারা দিচ্ছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে এমনও অভিযোগ উঠেছে। রাতের বেলা এসব চিনিকল এলাকায় ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। অথচ একসময় এসব চিনিকল এলাকায় ৫০ হাজার একরের বেশি জমিতে আখের আবাদ হতো। চার বছর আগে সরকার ওইসব চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ওইসব এলাকায় আখের আবাদও নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। আখ ও চিনি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৫ লাখ মানুষের জীবনজীবিকার চিত্র পাল্টে গেছে। যারা আখ আবাদ করতেন তারা এখন ওইসব জমিতে ধান, ভুট্টা, আলু, শাকসবজি চাষ করছেন। আবার যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তারা কেউ বেকার কেউ ভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে চার বছর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হলেও ওইসব মিল চালুর কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি এখন পর্যন্ত। ফলে এসব জেলায় মানুষের মাঝে ক্ষোভও জমাট বাঁধছে।এদিকে গত বছর আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জনসভায় শ্যামপুর সুগার মিল চালুর চিন্তা রয়েছে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর আবারও শ্যামপুর সুগার মিল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। চালুর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করে বিজনেস প্ল্যান করতে শীর্ষ আট কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

কমিটির প্রধান করা হয় বিএসএফআইসির উৎপাদন ও প্রকৌশল বিভাগের পরিচালককে। সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চিফ অব পারসোনেল অফিসার শাহরিনা তানাজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামতসংবলিত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়ারম্যান-বরাবর পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটি গঠনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে আখ চাষিসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।সূত্রমতে, যে ছয়টি চিনিকল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলোয় গড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করত। সে হিসেবে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করত। চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২ হাজারের মতো শ্রমিক অন্যান্য চিনিকলে কাজ পেলেও প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এদের কেউ রিকশা-অটোরিকশা চালাচ্ছে অথবা দিনহাজিরার মজুরিতে কাজ করছে।শ্যামপুরের আখ চাষি সামছুজ্জামান বলেন, তিনি আখ আবাদ করে মিলে বিক্রি করতেন। মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার জমিতে ধান, ভুট্টা, শাকসবজি আবাদ করছেন। তাঁর মতো শত শত চাষি আখের পরিবর্তে বিকল্প ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করছে।পঞ্চগড় চিনিকলের ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চিনিকল চালুর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

চিনিকলগুলো চালু না হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার বলেছেন, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালুর। চিনিকল এলাকাগুলোয় আখ চাষ কমে যাওয়ার কারণেও চিনিকলগুলো চালুর বিষয়ে একটি সমস্যা রয়েছে। তবে প্রথমে পঞ্চগড়, এরপর শ্যামপুর চিনিকল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর