রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রাজশাহী

♦ গড়ে ওঠেনি ভারী শিল্পকারখানা ♦ পুরনো শিল্পকারখানাও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ♦ বাড়ছে বেকারত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রাজশাহী

সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রাজশাহী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছে উত্তরের এই শহরটি। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য।

ষাটের দশকে রাজশাহীতে সরকারিভাবে চিনিকল, পাটকল, টেক্সটাইল এবং রেশমের মতো যে বড় চারটি শিল্প কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল- অবহেলা, লোকসানে সেগুলো এখন স্থবির। এরপর তেমন আর ভারী কোনো শিল্পকারখানা এখানে হয়নি। শিল্পায়নের দিক থেকে রাজশাহী বরাবরই থেকে গেছে অবহেলায়। এখানকার শিল্পোদ্যোক্তারা অন্য অঞ্চলে গিয়ে বিনিয়োগ করছেন। ফলে আশানুরূপ শিল্প গড়ে ওঠেনি রাজশাহীতে। নির্বাচনের আগে বারবার কর্মসংস্থানের কথা বললেও সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি জনপ্রতিনিধিরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ শফি উদ্দিন বলেন, কর্মসংস্থান একদিনে হয় না। ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে। এখনো গড়ে ওঠেনি, এটি দুর্ভাগ্য। কিন্তু এখানে এতদিন যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হলো, তার মধ্যে দিয়েই কেন কর্মসংস্থান গড়ে তোলা গেল না? যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প যখন গ্রহণ করা হয়, তখন সেখানে উল্লেখ করতে হয়- এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান কতগুলো হবে, আর পরোক্ষ কতগুলো।

উন্নয়ন কর্মী ও সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পাল বলেন, আগের শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেল, সেটি চালু রাখা গেলে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হতো। নতুন করে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু সেটিও কাজে লাগানো গেল না। রাজশাহীতে কর্মসংস্থান হতে পারে এমন কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। ফলে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে।

রাজশাহী চেম্বারের পরিচালক সাদরুল ইসলাম বলেন, একটি অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে গেলে যে আর্থসামাজিক পরিবেশ দরকার, তার কিছুই এ অঞ্চলে নেই। যেমন, রাজশাহীর যোগাযোগব্যবস্থা অপ্রতুল। সড়কপথই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ট্রেন চালু আছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। শুধু ব্রডগেজ লাইন আছে। বিমানে যাত্রী পরিবহন করা হলেও পণ্য পরিবহনের সুযোগ নেই। কারণ পণ্যবাহী কার্গো বিমান এখনো চালু হয়নি। সড়কপথে রাজধানী যেতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। রাজশাহীর কাছাকাছি যে বন্দরটি আছে, সেই সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের অবকাঠামো খুবই দুর্বল। এই অবস্থায় শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হন না ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে ২৫.৯৮ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের বিভিন্ন অংশ এখন ইজারা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইজারার টাকার ওপর ভর করেই এখন পরিচালিত হচ্ছে এক সময়ে উত্তরাঞ্চলে সুতার চাহিদা মেটানো টেক্সটাইল মিলটি। মিলের এখন নিজস্ব কোনো উৎপাদন নেই। মিলের ব্যবস্থাপক (কারিগরি) ও মিল ইনচার্জ রবিউল করিম জানান, এখন মিলের দেখাশোনার জন্য পাঁচজন স্থায়ী ও ১৫ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। রাজশাহীর ঐতিহ্যে মিশে আছে রাজশাহী সিল্ক (রেশম)। ২০০২ সালে তৎকালীন জোট সরকার লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে রেশম কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক। ২০১৮ সালের ২৭ মে পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৫টি লুম চালু করা হয়। এরপর আরও ১৪টি লুম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি মোট ১৯টি লুম নিয়ে রাজশাহী রেশম কারখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাপড় উৎপাদন শুরু হয়। তবে রেশম তার ঐতিহ্যে ফিরতে পারেনি।

১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাজশাহী পাটকল এখন মৃত। লোকসান দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই পাটকলটি বন্ধ করে সরকার। এতে কাজ হারিয়ে অসহায়ত্ব বরণ করতে হয় ১ হাজার ২০৯ জন স্থায়ী এবং ১ হাজার ৫০ জন বদলি শ্রমিককে।

ভালো নেই রাজশাহীর আরেক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান চিনিকল। এই চিনিকলে চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৫-৬৬ সাল থেকে। পরে ১৯৭২ সালে এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। চিনিকলটি চললেও তাতে আখ থাকে না। আখের অভাবে ২০২২-২৩ মাড়াই মৌসুমে চিনিকলটি চলেছে মাত্র ১৯ দিন।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর