বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেই তাহির এখন ঘরছাড়া

ইউপি সদস্যের তান্ডব

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

প্রথমে একঘরে, এরপর সাড়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা, ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং শেষ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা। নিজের করা মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হলেও এখন সপরিবারে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে সিলেটের জৈন্তাপুরের চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বৃদ্ধ মো. তাহের আলীকে। এসব ঘটনা ও ষড়যন্ত্রের জন্য তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমদকেই দায়ী করছেন। পূর্ববিরোধের জের ধরে ইউপি সদস্য ফারুক তার পরিবারকে ভিটেছাড়া করার মিশনে নেমেছেন বলে অভিযোগ তার। হামলা ও অগ্নিসংযোগের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও নিজেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় হয়রানি না করতে গতকাল সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন জানিয়েছেন তাহের আলীর স্ত্রী হাসিনা বেগম। তাহের আলীর পরিবারের অভিযোগ, গত ১৩ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আয়ানী। তার পরিবারের সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করেন। আয়ানীর স্ত্রী বা সন্তানরা থানায় কোনো মামলাও করেননি। ওই সময় পূর্ববিরোধের জের ধরে ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ পুলিশকে হত্যা মামলা নিতে চাপ সৃষ্টি করে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে ইউপি সদস্য ফারুক এলাকায় নানাভাবে তাহের আলীর পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র শুরু করেন।

 তাহের আলীর স মিল ও দুটি ফার্নিচারের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন ইউপি সদস্য ফারুক ও তার লোকজন। এরপর ২১ জুন ফারুক গ্রামবাসীকে ডেকে তাহের আলীর পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করেন। তার পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বললে ৫০ হাজার টাকা ও দোকানিরা সদাইপাতি বিক্রি করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার হুমকি দেন তিনি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তাহের আলী। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।

গত ৫ জুলাই মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ ও তার লোকজন তাহের আলী ও তার স্বজনদের বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে। তান্ডব চালিয়ে ২ বছরের শিশু, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বাসহ অন্তত ২০ জনকে আহত করে। দুই বছরের শিশুর মাথায় দা দিয়ে কোপ দেয় হামলাকারীরা। বর্তমানে শিশুটি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। হামলার খবর পেয়েও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। ঘটনার পরদিন বিষয়টি গণমাধ্যমে জানাজানি হলে পুলিশ মামলা নেয়। কিন্তু মামলার ১১ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করে তাদেরকে জামিন নেওয়ার সুযোগ করে দেয় বলে অভিযোগ করেন তাহের আলীর পরিবার। জামিন পেয়ে আসামিরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা দুর্ঘটনায় নিহত আয়ানীর ভাইকে প্রভাবিত করে আদালতে তাহের আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করায়। তাহের আলী অভিযোগ করেন, যেসব আসামি এখনো জামিন পায়নি তারাও এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিচ্ছে। তারা এও বলে বেড়াচ্ছে পুলিশ ম্যানেজ করেই তারা মুক্ত আছে। পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া আবেদনে তাহের আলীর স্ত্রী হাসিনা বেগম তাদের বসতঘরে হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেপ্তার এবং আদালতে করা ‘মিথ্যা’ হত্যা মামলায় তার পরিবারকে হয়রানি না করার অনুরোধ জানান। জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, মামলার আসামিদের কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে কয়েকজন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর