শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন রাজধানী

সড়ক-রেল-নৌপথ বন্ধ বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট আজ থেকে বন্ধ মেট্রোরেল জনদুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে গতকাল ছুটির দিনেও বন্ধ ছিল দেশের যোগাযোগব্যবস্থা। চলেনি দূরপাল্লার পরিবহন। গাড়ির চাকা ঘোরেনি আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও। বন্ধ ছিল রেল চলাচল। বিভিন্ন স্থানে উপড়ে ফেলা হয়েছে রেলের স্লিপার। আগুন জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় যান চলাচলে। নাশকতার আশঙ্কায় ও যাত্রী না পাওয়ায় বেশ কিছু রুটে নৌ-চলাচলও গতকাল বন্ধ হয়ে যায়। নাশকতার আশঙ্কায় আজ থেকে মেট্রোরেল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যাত্রীরা বিমানবন্দরে সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় অনেক ফ্লাইটও বিলম্বে ছাড়ে। এতে ফ্লাইট শিডিউল ওলট-পালট হয়ে যায়। বিলম্বে ছাড়ার পরও অনেক যাত্রী ফ্লাইট ধরতে পারেননি।

আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও রাজধানীর মহাখালী, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। নরসিংদীর বাসাইলে রেললাইনের স্লিপার তুলে ফেলা হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। শিক্ষার্থীদের ব্যারিকেডে আগের দিন থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুলনা, বরিশাল, যশোর, সিলেট, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের অন্যান্য এলাকা থেকেও গতকাল রাজধানীতে দূরপাল্লার কোনো বাস আসেনি, রাজধানী থেকে কোনো বাস ছেড়েও যায়নি। মহাখালী থেকে গতকাল দুপুরের দিকে মাইকিং করে বাস ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও যাত্রীর অভাবে ছাড়তে পারেনি দূরপাল্লার বাস। বৃহস্পতিবার রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও চালু ছিল লঞ্চ যোগাযোগ। গতকাল ঢাকা-চাঁদপুর রুটে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের কর্মজীবী মানুষ। চরম বিপাকে পড়ে দিন এনে দিন খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। পরিবহন শ্রমিকরাও বেকার দিন পার করছেন। রাজধানীর তুরাগ পরিবহনের হেলপার জাহিদ বলেন, তিন দিন ধরে কাজ বন্ধ। হাতের টাকা শেষ। ঘরের বাজার শেষ। মেয়েটা অসুস্থ। চিকিৎসা করাতে পারছি না। এই পরিস্থিতি আর কয়েকদিন চললে সবাইকে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গত সপ্তাহে ওপেনহার্ট সার্জারি হয়েছে গাইবান্ধার মোহাম্মদ আলীর। তার ছেলে জিম বলেন, দু-একদিনের মধ্যে মামাকে রিলিজ করবে। তখন বাড়ি নিয়ে যাব কীভাবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এ ছাড়া অনেক ওষুধ দূর থেকে আনতে হয়। সেটা আনতে ঝামেলা হচ্ছে। এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানীতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছে রাইড শেয়ার ও রিকশা। এক্ষেত্রে প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকরা। বাইকে রাইড শেয়ার করা মোজাম্মেল হক বলেন, অনেক অলিগলি ঘুরে, ভাঙা রাস্তা দিয়ে যেতে হচ্ছে। আবার জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। এ কারণে ভাড়াটা কিছুটা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল ঢাকার প্রধান সড়কগুলো ছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দখলে। ছুটির দিনে খুব বেশি মানুষ রাস্তায় না নামলেও যারা চিকিৎসা বা অন্যান্য জরুরি কাজে বাইরে বের হন, তাদের ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কুড়িল চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক জানান, উত্তরায় একটা ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। একটা সিএনজি অটোরিকশায় এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে পেরেছিলাম। রাস্তা বন্ধ থাকায় বাসায় ফিরে আসতে হয়েছে। এখন আশপাশে অন্য কোনো ডাক্তার দেখাতে হবে। এদিকে অনেক মানুষকে ৫-৭ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি পথ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।

গত কয়েকদিনের আন্দোলনে রাজধানীতে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সরবরাহে বিঘ্নে ঘটছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসতে পারছে না চাল, ডাল, পিঁয়াজ, মাছ, সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য। ঢাকার ভিতরেও সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। এর প্রভাবে বাজারে প্রতিটা পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। সবজির দামই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পণ্যের সংকটও দেখা দিয়েছে অনেক এলাকায়।

 

 

সর্বশেষ খবর