শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
রাজশাহী

বদলি কারে কয় তারা যেন কেউ তা বোঝেনই না

সংখ্যায় শতাধিক বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ে কেউ পাঁচ বছর কেউ ৩০ বছর ধরে খুঁটি গেড়ে রয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সৈয়দ আখতার জাহান সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিএমডিএ) কর্মরত। ৩০ বছর ধরে তিনি আছেন প্রধান কার্যালয়ে। অন্যদের বদলি হলেও এই কর্মকর্তা কখনোই বদলি হননি। নির্বাহী পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের একই হাল। তিনিও ৩০ বছর ধরে প্রধান কার্যালয়ে। শুধু ওই দুই কর্মকর্তা নন, শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী দশক ধরে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। সিন্ডিকেট গড়ে তারা প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করছেন। তাদের বদলি আদেশও হয় না কখনো। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক শাখার নথি থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী- শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম পাওয়া গেছে, যারা প্রধান কার্যালয়ে আছেন পাঁচ থেকে ৩০ বছর ধরে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান অবশ্য স্বীকার করেছেন দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়ে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির কথা। তাদের বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

বিএমডিএ সূত্র অনুযায়ী, ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবির আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী রুবিনা খাতুন, মনিটরিং অফিসার আশরাফুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী মাহমুদা হাসনাত খানম, হায়দার আহমেদ, শওকত আরা নাসরিন ও সাব্বির রহমান, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রাজিনা খাতুন, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিল মাহফুজা বেগম, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এস এম রফিকুল ইসলাম ও আয়েশা সুলতানা, কম্পিউটার অপারেটর আঞ্জুমান আরা, জুনিয়র প্রোগ্রামার শহিদুল ইসলাম, গাড়িচালক মিজানুর রহমান, আবদুর রহমান ও নিরাপত্তা প্রহরী সায়েরা বেগম। ১০ থেকে ১৯ বছর ধরে কর্মরত আছেন সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশীদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হুদা ও আবুল কাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ টি এম মাহফুজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কাদির, তোফাজ্জল আলী সরকার, রেজাউল ইসলাম ও এ টি এম রফিকুল ইসলাম, হিসাব নিয়ন্ত্রক রোকনুজ্জামান বিশ^াস, সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ারা খাতুন ও গিয়াস উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাদেরী কিবরীয়া, ওয়াজেদ আলী, সিরাজুল হক, দিলরুবা পারভীন ও ময়েজ উদ্দিন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ জামান, শরিয়তুল্লাহ ও আবদুল মালেক, উপসহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান, খন্দকার নাদিরুজ্জামান, শামসুল হক, নজিবুল ইসলাম ও এ এস এম শক্তিয়ার জাহান, পরিদর্শক মোকসেতুন হক আমিনা, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরিফুল হক, নূরী বিনতে হাবীব, জোহাক আলী ও আবদুল হাকিম, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম ও মেসবাউল হক, নকশাকার আইরিন হালিমা সৈয়দা, নাদিরা খাতুন, শিরিনা বেগম, জেহের আলী, সহকারী কোষাধ্যক্ষ রকিবুল হাসান ও মামুন হোসেন, ভান্ডার রক্ষক মো. জীবন, সহকারী মেকানিক শহিদুল ইসলাম, চালক আবদুল মালেক শেখ, সারোয়ার হোসেন, ফিরোজ শাহ, খায়রুল বাশার, আবদুস সাত্তার, মো. গাজিমুদ্দিন ও আবদুস সবুর, ট্রাক সহকারী আজিম উদ্দিন ও শামীম হোসেন, অফিস সহায়ক অসীম কুমার সাহা, রোকনুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম ও সেলিম রেজা, নিরাপত্তা প্রহরী তাহাজুল ইসলাম, জাকির হোসেন, খুরশেদ আলম, আনরুল ইসলাম ও সোলায়মান আলী। এদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী আগে থেকেই চলতি দায়িত্বে ছিলেন। নিয়ম না মেনে কয়েকদিন আগে পদোন্নতি দিয়ে চলতি দায়িত্বে আবারও প্রধান কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। পাঁচ থেকে ৯ বছর ধরে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন- তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম ও শহিদুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম, এ কে এম ওবায়দুল্লাহ, নাজমুল হুদা ও কামরুল আলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রৌশনারা বেগম, নকশাকার এনামুল হক। চালক আবদুল হালিম, নিরাপত্তা প্রহরী তাহাজুল ইসলাম, বিমল ও সোলায়মান আলী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএমডিএর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুগ যুগ ধরে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। তাদের বদলি হয় না। রংপুর বিভাগেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আছে। কিন্তু এই কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ের বাইরে কখনো যান না। ফলে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও সিনিয়র এসব কর্মকর্তারা পিছিয়ে।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান জানিয়েছেন, অনেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়ে, আবার অনেকে বহুদিন বাইরে চাকরি করছেন। তারাও প্রধান কার্যালয়ে আসতে চান। এ বিষয়ে একটা পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

 

 

সর্বশেষ খবর