রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভেঙে পড়েছে সরবরাহ চেইন

সংঘাতের আঁচ নিত্যপণ্যের বাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভেঙে পড়েছে সরবরাহ চেইন

গত কয়েকদিনের সংঘাতে ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে পণ্যের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। সকালের সবজির দাম বিকালেই বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, মরিচ, পিঁয়াজ, মাছ-মাংস সব কিছুর দামেই প্রভাব ফেলেছে চলমান অরাজক পরিস্থিতি। আন্দোলন-সংঘাতের কারণে সারা দেশ থেকে পণ্যবাহী যান রাজধানী ঢাকায় ঢুকতে না পারার কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে।

ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার প্রথম দিকে খুব একটা প্রভাব পড়েনি পণ্যের বাজারে। তবে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই দুই দিন আন্দোলন রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নিলে পরিস্থিতি বদলে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে সবজি, মাছ, পোলট্রি মুরগি, ডিম, কাঁচামরিচ, পিঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। পণ্যবাহী ট্রাক আগের মতো ঢুকছে না। শুধু রাতের বেলায় কিছু ট্রাক পণ্য নিয়ে রাজধানীতে আসছে। আগে থেকে মজুদ করা পণ্যেও টান ধরেছে। সরবরাহের তুলনায় পণ্যের চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা, পিঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা, টম্যাটো বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০-১২০ টাকা, করোল্লা ১০০-১৩০ টাকা, পটোল বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা, ধুন্দুল ৭০-১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৫০-৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৭০-১০০ টাকা, পেঁপে ৬০-৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা। কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, ৬০-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। এ ছাড়া বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়, এ ছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০-৪০০ টাকা, কক মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০-৪০০ টাকা এবং দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আগের মতোই প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস মানভেদে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা দাম কমে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৯০-২০০ টাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতার সংখ্যাও কম। আশপাশে নেই কোনো মাছ চালানের ট্রাক। বিক্রেতারা জানান, ট্রাক না আসায় আগের মাছ দিয়েই দোকান চালাচ্ছেন। দাম কিছুটা বাড়তি বলেও স্বীকার করেন তারা।

রাজধানীর মিরপুর বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হানিফ মাহমুদ বলেন, দোকানে পণ্য নেই। বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। এখন বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। সবজিসহ সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট কয়েক গুণ বেড়েছে। খিলক্ষেত বাজারের সবজি বিক্রেতা কাউসার মাহমুদ বলেন, কয়েকদিন ধরে সবজির ঠিকমতো সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষক খেত থেকে ফসল তুলে রাজধানীতে পাঠাতে পারছে না। ফলে অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। তাই সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি।

শুধু যে কাঁচাপণ্য ও পোলট্রির দাম বেড়েছে তাই নয়, চলমান পরিস্থিতির কারণে ভোজ্যতেল, চিনির মতো খাদ্যপণ্যেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা গোলাম মওলা বলেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি নামতে পারছে না। রূপগঞ্জ থেকে আমরা কোনো মাল আনতেও পারছি না। এখন মজুদপণ্য দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে মজুদ ফুরিয়ে গেলে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে অস্থিরতা শুরু হতে পারে।

পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, চলমান সংঘাত তাদের দ্বিমুখী চাপে ফেলেছে। ঝুঁকির কারণে খামারে কোনো ট্রাক আসছে না ডিম ও মুরগি নিতে। লাখ লাখ টাকার ট্রাক জ্বালিয়ে দিলেই শেষ। এতে করে যারা উৎপাদনকারী তারা ন্যয্যমূল্য পাচ্ছে না। আবার সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে খুচরা পর্যায়ে ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে দাম বেড়ে যাচ্ছে। পোলট্রি মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধির এই সুবিধা উৎপাদনকারী পাচ্ছে না। সুযোগসন্ধানীরা সংকটের সুযোগ নিয়ে ভোক্তাদেরও পকেট কাটছে। 

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, কয়েকদিন ধরে নৈরাজ্যের কারণে সরবরাহে বিঘ্নে ঘটেছে। এর সঙ্গে আগ থেকে ওত পেতে থাকা সিন্ডিকেট এখানে যুক্ত হয়েছে। এসব কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তবে বিক্রেতারা যে দাম চাচ্ছে এটা আরও বেশি নৈরাজ্য। সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে দু-এক দিনের মধ্যে বাজার ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর