মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
রপ্তানি বন্ধ দুই সমুদ্র বন্দরে

অচল পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দর

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

অচল পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দর

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সারা দেশে কারফিউ জারির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় কাস্টমস হাউসে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পণ্য খালাসের গেট পাস না পাওয়ায় আমদানি পণ্য খালাস হচ্ছে না। রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণও বন্ধ রয়েছে। সংকট কাটাতে সীমিত পরিসরে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোগ্য, পচনশীল ও রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন সুবিধা দেওয়া হলেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, শনিবার থেকে পোশাকের রপ্তানি চালান ও পচনশীল আমদানি পণ্য চালান খালাসে ২০ বছর আগের ম্যানুয়াল পদ্ধতির সুযোগ দেওয়া হয়। তাতেও আশানুরূপ সাড়া নেই। শুক্র, শনি ও রবিবার আমদানি-রপ্তানির নতুন কোনো চালান শুল্কায়ন হয়নি। শুল্কায়ন না হলে গেট পাস দেওয়ারও সুযোগ নেই। আর গেট পাস ছাড়া বন্দর থেকে পণ্য খালাস করা যায় না। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার প্রদীপ দাশ জানান, ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আগে ১৭ চালানের বাল্কপণ্য আগে থেকে শুল্কায়ন করা ছিল। ম্যানুয়াল পদ্ধতি শুরুর পর এ চালানগুলো খালাস হয়েছে। তবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের পর নতুন করে কোনো চালান শুল্কায়ন হয়নি। বন্দর ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্যের চালানগুলো চট্টগ্রামের কন্টেইনার ডিপোতে রাখা হয়। এর পর সিলগালা করে এসব কন্টেইনার বন্দরের মাধ্যমে জাহাজীকরণ করা হয়ে থাকে। এসব প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে অনলাইনে নানা তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হয়।  চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড়ে ২ হাজার কন্টেইনার পণ্য জাহাজীকরণ করা হতো। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় এখন পণ্য জাহাজীকরণের হার অতি নগণ্য। সর্বশেষ গত রবিবার ১৭৮টি রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজে তোলা হয়, যেগুলো বৃহস্পতিবারের আগে শুল্কায়ন করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি সচল রাখতে এনালগ পদ্ধতিতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। যে কোনো আমদানিকারক শুল্কায়ন শেষ করে ম্যানুয়ালি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাবমিট করলে পণ্য খালাস হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গার্মেন্ট পণ্যের রপ্তানিকারক বলেন, ‘শুধু শুল্কায়ন করলে তো আর পণ্য জাহাজে তোলা যায় না। পাশাপাশি আমাদের ক্রেতাপক্ষের সঙ্গে নানা বিষয় সমন্বয় করতে হয়। আন্তর্জাতিক নানা যোগাযোগেরও বিষয় থাকে। যেগুলো ইন্টারনেট ছাড়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ না রেখে উপায় কী?’ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘ম্যানুয়ালি কিছু পণ্যের শুল্কায়ন হলেও তা অতি নগণ্য। এটা দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। ইন্টারনেট সংযোগের কোনো বিকল্প নেই। গেট পাস না পাওয়ায় দেড়ু হাজারের বেশি আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার বন্দরে আটকে আছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। যেগুলোতে নিত্যপণ্যের সঙ্গে দ্রুত পচনশীল পণ্যও আছে।’ এদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, কারফিউর কারণে রাস্তায় যেহেতু যানবাহন চলাচল বন্ধ, সে কারণে পরিবহন মালিকরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় গাড়ি নামাতে অনাগ্রুহী। তাই ম্যানুয়াল ব্যবস্থায় কোনোভাবে বন্দর থেকে চালান খালাস হলেও সেগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে নেওয়া যাবে না। এ কারণে পণ্য খালাসে আমদানিকারকদের আগ্রুহ কম। সবাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করছেন।

সর্বশেষ খবর