বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যাংক বিমা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর

বগুড়ায় সহিংসতায় ক্ষতি কোটি কোটি টাকা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

ব্যাংক বিমা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর

বগুড়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনায় গত ছয় দিনে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। ব্যাংক, বিমা, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলাসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই ক্ষতি হয়েছে। সহিংসতায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার কারণে টানা কয়েক দিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ লোকসানে পড়েছেন জেলার ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ক্রেতার অভাবে প্রতিদিন গড়ে জেলায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তারা বিপাকে পড়েছেন পরিবারপরিজন নিয়ে। সেই সঙ্গে আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় কষ্টে জীবনযাপন করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া বাস, মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরাও কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনকারীরাও ক্রেতার অভাবে বেকায়দায়। বিশেষ করে বগুড়ার বিখ্যাত দই মিষ্টির বাজার দেশ ও দেশের বাইরে। বগুড়া জেলায় কয়েক হাজার দইয়ের দোকান ও শো-রুম রয়েছে। আন্দোলনে সহিংসতার কারণে দইয়ের কারিগররা পথে বসেছেন। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে গত বুধবার থেকে বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারছেন না। একই সঙ্গে সরকারি নির্দেশনায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। যার ফলে শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল একেবারেই কম।

প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এতে করে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন বগুড়ার ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফল ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।

বগুড়া শহরের স্টেশন সড়কে ৫৫ থেকে ৬০টি ফলের আড়ত রয়েছে। এসব আড়ত থেকে প্রতিদিন শতাধিক টন বিভিন্ন ধরনের ফল জেলার ১২টি উপজেলা ছাড়াও বাইরের জেলাগুলোতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া বগুড়া জেলা সদরের বিভিন্ন হাট-বাজারে ৫ থেকে ৬ শতাধিক ফলের দোকান এবং শহরে অর্ধশতাধিক ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ী এসব আড়ত থেকে ফল কিনে বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করে থাকেন। স্বাভাবিক সময়ে দেশি-বিদেশি ফল মিলে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ফল আড়তগুলো থেকে বিক্রি হতো।

এদিকে বগুড়া শহরের স্টেশন সড়ক, গোহাইল সড়ক, শেরপুর সড়ক, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক ও কাঁঠালতলাসহ শহরের অন্যান্য সড়কে প্রায় ১ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্বল্প পুঁজির দোকান নিয়ে ফুটপাতে বসতেন। ফুটপাতে ব্যবসা করে তাদের সংসার চলত। কিন্তু গত কয়েক দিনে তাদের ব্যবসা বন্ধ থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। একই অবস্থা শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতান, শপিংমল ও অন্যান্য মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরও। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।

বগুড়া আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, বগুড়া রাজাবাজারে ২৮টি আড়ত রয়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এসব আড়তে এনে বিক্রি করে থাকেন। সহিংসতার কারণে কৃষকরা পরিবহনযোগে কৃষিপণ্য আনতে পারছেন না। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আড়তদাররাও অল্প বিক্রির কারণে লাভবান হতে পারছেন না। সেই কারণে বগুড়ায় কৃষিপণ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি মাফুজুল ইসলাম রাজ জানান, সহিংসতার ঘটনায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। টানা ছয় দিনে বগুড়ার ১২টি উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রুস্ত ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর