শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম

পূর্বাঞ্চলে রেলের ক্ষতি ২২ কোটি টাকা

♦ ভাঙচুর ও পোড়ানো হয় ৪০ বগি ♦ অনিশ্চিত রেল চলাচল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো রেল চলাচল অনিশ্চিত। কখন থেকে রেল চলাচল শুরু হবে তাও বলতে পারছেন না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে গতকাল বিজিবির পাহারায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে চারটি তেলবাহী রেল পরীক্ষামূলক চলাচল করে। এ সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যথাসময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে। অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চারটি ট্রেনের ৪০টি বগি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রেল চলাচল না করায় চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। জানা যায়, ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে। তাছাড়া জনগণের নিরাপত্তায় সরকার কারফিউ ঘোষণা করে। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের রেল চলাচল বন্ধ রাখে। কার্যত এর পর থেকে আর কোনো রেল চলাচল করেনি। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে গতকাল শুক্রবার চারটি তেলবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভোর সাড়ে ৫টায় ২৪টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন ঢাকা, সাড়ে ৬টায় ১৬টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন সিলেট, সকাল সাড়ে ১০টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন দোহাজারী এবং ১১টায় ১২টি তেলবাহী বগিসহ একটি ট্রেন হাটহাজারী স্টেশনের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ছেড়ে যায়। প্রতিটি ট্রেনে বিজিবি চট্টগ্রাম থেকে এক প্লাটুন করে সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চারটি ট্রেনের ৪০টি বগি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ৭টি, চট্টলা এক্সপ্রেসের ১৩টি, জামালপুর এক্সেপ্রেসের ৬টি, পারাবত এক্সপ্রেসের ৮টি ও কিশোরগঞ্জ এক্সেপ্রেসের ২টি বগি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কিশোরগঞ্জ এক্সেপ্রেসের ৪টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে দেয়া হয়। তাছাড়া, চট্টলা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিন ভাঙচুর করা হয়। রেলের বেশি ক্ষতি হয়েছে বাণিজ্যিক ও যান্ত্রিক বিভাগের। সব মিলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রেলের ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।

রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখনো রেল চলাচল বন্ধ আছে। কখন রেল চালু করা সম্ভব হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে তেলবাহী চারটি রেল চারটি স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেয়। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। এটি নিরাপত্তার বিষয়ে পরীক্ষামূলক চলাচল। বাকিটা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনে রেলের অনেক সম্পদের ক্ষতি হয়। তাছাড়া রেল চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথের নিয়মিত যাত্রী ইরশাদ বলেন, ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত ঢাকা যাতায়াত করতে হয়। রেলই আমার প্রথম পছন্দ। কিন্তু এখন সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত দুই সপ্তাহ ঢাকা যেতে পারছি না।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, পূর্বাঞ্চলের অধীন চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্টেশনের উদ্দেশে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রেল চলাচল করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম- ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম-জামালপুর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-হাটহাজারী রুটে প্রায় ৫২টি আন্তনগর, লোকাল এবং কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া আছে ২০টি (১০ জোড়া) চবি শাটল ট্রেন এবং ৫টি মালবাহী ট্রেন। পূর্বাঞ্চলের অধীন রেলগুলো দৈনিক প্রায় ১৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর