সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে গাজীপুরে ক্ষতি ৫৯ কোটি ৩১ লাখ

কোটা সংস্কার আন্দোলন

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে গাজীপুরে ক্ষতি ৫৯ কোটি ৩১ লাখ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ক্ষতচিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে। হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিনের নাশকতার ঘটনায় গাজীপুরের ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ৫৯ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হিসেবে ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫৯ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাজীপুরা, বোর্ড বাজার, গাছা, কোনাবাড়ি ও চান্দনা চৌরাস্তা ৫টি পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে এপিসি গ্লাস। এ ছাড়াও টঙ্গী পশ্চিম ও গাছা থানায় ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে থানা ও পুলিশ বক্সে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। হামলায় বিআরটি প্রজেক্টের ২৫টি এক্সেলেটর, ২ হাজার বর্গ মিটার এসএস রেলিং, একটি এস্কাভেটর, ৩ হাজার কেজি এমএসইওয়াল প্যানেল ফর্ম ওয়ার্ক, ৬টি ইলেকট্রিক হ্যামার, ৪টি ওয়েল্ডিং মেশিন, ২টি রোডকাটিং মেশিন, ৩৬০ মিটার ফেন্সিং ও প্লাস্টিক ট্রাফিক ব্যারিয়ার, ৭টি স্টেশনে জেনারেটর, পানির লাইন ও ইউলিটি সংযোগ এবং একটি প্রকল্প সাইট অফিসের ক্ষতি সাধন হয়েছে। সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. মো. শরিফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুরে যে সহিংসতা হয়েছে তাতে আমাদের আনুমানিক ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যানবাহনের পাশাপাশি ইটপাটকেল ছুড়ে ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। সূত্রমতে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আরও ১৩টি যানবাহন। এর মধ্যে জিপ গাড়ি ৩টি, পিকআপ ৫টি, ড্রাম ট্রাক ১৮টি, কম্পক্টর ১টি, মোবাইল কোর্ট গাড়ি ১টি, বিদ্যুতের গাড়ি ২টি, হুইল লোডার ১টি ও টেম্পু ১টি। তারা গাজীপুর সিটির জোন-১ এর ভবনের দরজা, জানালা ভাঙচুর এবং নিচতলার ৩টি কক্ষ পুড়িয়ে দেয়। আঞ্চলিক কার্যালয় জোন-৩ এর ভবনের দরজা জানালাও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৪টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা ৪টি ট্রাক, হাইড্রোলিক হ্যামার, বিআরটি প্রজেক্টের অফিস গেট ও ভবনসহ অন্যান্য মালামাল ভাঙচুর করে। এতে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম জানান, আন্দোলনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। অনেক যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে, এতে অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপ-কেন্দ্রের অফিস ভবন, ১০টি কম্পিউটার, ৭টি প্রিন্টার, এসি কমপ্রেসারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী ব্যাপক ভাঙচুর করে ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। হামলাকারীরা টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মার ভিতরে ৪টি গাড়ি পুড়িয়েছে। ৬টি সিসি ক্যামেরা, ৬টি কাভার্ড ভ্যান, ২টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর ও বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মোট ৩ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার পুলিশ বক্সটির টিনের চাল, চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাশের সড়ক ও জনপথের কার্যালয়ের ভিতরে চারটি পোড়া গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা  গেছে। আশপাশের ঘরবাড়ি ও দালানের ভাঙা গ্লাসগুলো এখনো দেখা যাচ্ছে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের স্টেশনগুলোয় রাখা এসকেলেটরগুলোর আংশিক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনাবাড়ী এলাকার পুলিশবক্স পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ কার্যালয়ের মূল ফটকের পাশে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও যন্ত্র বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার দুটি কক্ষেই ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কক্ষের ভিতরে পড়ে আছে আগুনে পোড়া আসবাব ও কাগজপত্র। কক্ষ দুটির সামনে একটি ফাঁকা জায়গায় সারিবদ্ধ ২৫টি গাড়ি। ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া এসব গাড়ি অকেজো হয়ে পড়েছে। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ, কাচ ও বিভিন্ন জিনিসপত্র। কার্যালয়ের সামনে একেবারে দক্ষিণ পাশে একটি টিনের ছাউনির নিচে সারিবদ্ধভাবে রাখা ৬টি গাড়ি। সবকটি গাড়িই আগুনে পোড়া।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর