বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

অনিশ্চিত ব্যারিকেড অর্থনীতিতে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অনিশ্চিত ব্যারিকেড অর্থনীতিতে

রাস্তার ব্যারিকেড উঠে গেছে। ওঠেনি অর্থনীতির ব্যারিকেড। এই ব্যারিকেড কবে উঠবে- কেউ জানে না। এরই মধ্যে অর্থনীতির সূচকগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। সমন্বয়ের অভাবে রপ্তানি আয়ের হিসাব দিতে পারছে না ইপিবি। রেমিট্যান্স আয়ে ধস নেমেছে। ইন্টারনেট সমস্যায় বিপর্যয়ে পড়েছে ই-কমার্স খাত। পর্যটনেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।  ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) বলেছে, ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ফলে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও অর্থনীতির শিক্ষক প্রফেসর আবদুল বায়েস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির খোঁড়া পা গর্তে পড়ে গেছে। করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা সংকটে অর্থনীতি এমনিতেই নাজুক অবস্থায় ছিল। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কাবু নিম্ন আয়ের মানুষ। বিদেশি সাহায্য কমে যাচ্ছে। কোটা আন্দোলন ঘিরে রাজপথের সংঘাত অর্থনীতিকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান আন্দোলনে বড় আঘাত লেগেছে রেমিট্যান্স আয়ে। টানা প্রায় এক সপ্তাহ ব্যাংকিং কার্যক্রম ও লেনদেন বন্ধ থাকায় প্রবাসী আয় আসা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনকে ঘিরে একটি গোষ্ঠী রেমিট্যান্স না পাঠাতে অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসে ২৭ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। জুনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার।  এদিকে রপ্তানি আয়ের কোনো হিসাবই নেই। পরিসংখ্যানের গরমিলের কারণে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ রপ্তানি আয় বেশি দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা হিসাব থেকে বেশি দেখানো রপ্তানি আয় বাদ দিয়েছেন। এরপর থেকেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রতি মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই খাতের নেতিবাচক প্রভাবের পরিমাণ প্রকৃত অর্থে কত সেটি জানা যাচ্ছে না। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, রাজপথের আন্দোলন-সংঘাতে পাঁচ দিন কারখানা বন্ধ থাকায় তাদের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের পর্যটন খাত। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও মানুষের মনে ভয় ও উদ্বেগ থাকায় পর্যটন শিল্পে এখনো স্থবিরতা বিরাজ করছে। কক্সবাজারের হোটেল ও রিসোর্ট মালিকরা জানিয়েছেন, অনিশ্চয়তার কারণে হোটেল-মোটেলে নতুন বুকিং নেই বললেই চলে।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেটের গতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সহজে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। ফলে ইন্টারনেটভিত্তিক ই-কমার্স বাণিজ্যে ধস নেমেছে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে হাজার কোটি ডলারের ফ্রিল্যান্সিং-এর বাজার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলেও উদ্বেগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।  ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনলাইন ব্যবসা বিপর্যয়ে পড়ে। এখন ইন্টারনেট চালু হলেও ফেসবুক বন্ধ থাকায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না। গত কয়েক দিনে এই খাতের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে ব্যারিকেড দ্রুত তুলে দেওয়া না হলে অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

সর্বশেষ খবর