কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে রংপুরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের তান্ডবের সময় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন দলীয় অনৈক্য ও কোন্দল। কোন্দল মিটিয়ে এ দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ কি রংপুরে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? ক্রান্তিকালে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এক কাতারে থাকতে পারবে এমন নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে। রংপুরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গা-ছাড়া ভাবে ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা।
জানা গেছে, ১৮ ও ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে শুরু হয় তান্ডব ও নাশকতা। ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়। বাদ যায়নি শ্রমিক লীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অফিসও। একই সঙ্গে রংপুর নগরীর তাজহাট থানা, ডিবি কার্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবি ১৮ জুলাই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তান্ডব ও অগ্নিসংযোগের পরপরই অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী নাশকতাকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন। ঘটনার পর দলীয় কার্যালয় ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী। কিন্তু মূল দায়িত্বে থাকা অনেক নেতাই সে সময় গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। ঘটনার দুই দিনেও দলীয় কার্যালয়ে আসেননি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এতে ক্ষুব্ধ দলের কর্মী-সমর্থকরা।ঘটনার সাত দিন পর মামলা করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এতে তৃণমূলে ক্ষোভ রয়েছে। মহানগরে মামলা করেছেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম এবং জেলার পক্ষে মামলা করেছেন জিন্নাত হোসেন লাভলু। মহানগরে ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েক শ জন ও জেলায় ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ মামলায় কেউ বাদী হতে চায়নি বলে মামলা করতে দেরি হয়েছে। দলের কর্মীদের আরও অভিযোগ শীর্ষ নেতারা জানত দলীয় কার্যালয়ে হামলা হতে পারে। তারা কর্মীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান না নিয়ে কৌশলে চলে যান। এ অবস্থার জন্য দলের কোন্দলকে দায়ী করছেন তৃণমূল কর্মীরা। তাদের মতে এখনই যদি শক্ত হাতে দলীয় কোন্দল মেটানো না যায় তাহলে রংপুর আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব হারাবে।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান বলেন, আমার মনে হয় ক্ষমতার সুবিধা নিয়ে কারা দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে ঘুমিয়ে আছেন আর বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। দলের সাংগঠনিক ভিত্তিকে গোছানো ও মজবুত না করতে পারলে সামনে এর চেয়েও বেশি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, দলকে সুসংগঠিত করার এখনই সময়। এ সময় সব ভেদাভেদ ভুলে দলীয় ঐক্যের প্রয়োজন।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেন, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আমরা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা চলে আসার পরপরই হামলা হয়েছে।