শিরোনাম
বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাতক্ষীরা কারাগার থেকে পালালেন ৫৮৮ কয়েদি

আওয়ামী লীগ নেতাসহ নিহত ১০, হামলা লুটপাট আগুন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগ পরবর্তী সহিংসতায় সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত ১০-১২ জন। এ ছাড়া সাতক্ষীরা জেলা কারাগার হামলা ভাঙচুর হয়েছে। এ সময় সেখান থেকে ৫৮৮ জন কয়েদি পালিয়ে গেছে। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে পুলিশ সুপারের বাস ভবন, সাতক্ষীরা সদর থানা, কলারোয়া ও শ্যামনগর থানায়। অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের দোকান-পাট ও বাড়িতে হামলা হয়েছে। চলেছে লুটপাট। সোমবার বিকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত হামলা, লুটপাট ও সহিংসতার এসব ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সংখ্যালঘু পরিবার ও আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নেতা-কর্মীরা নিজস্ব বসা-বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রাণ ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছে।

নিহতরা হলেন- সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন (৫৩), একই গ্রামের শেখ শাকের (২২), শেখ জাহাঙ্গীর (৪৮), শেখ আশিক (৩৩), লস্করী খাজরা গ্রামের শাহিন আলম (২২), একই গ্রামের সজীব (২২), কুড়িকাউনিয়া গ্রামের হাফেজ আনাজ বিল্লাহ (২১), একই ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের আদম আলী (২৩), হিজলিয়া গ্রামের আলমগীর হোসেন (১৬) এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামের আসাফুর রহমান (৬০)।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী ও এলাকাবাসী জানান, সোমবার বিকাল ৫টার দিকে এলাকার শত শত মানুষ বিজয় মিছিল নিয়ে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাকনা গ্রামের জাকির হোসেনের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়ির গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে জাকির বাড়ির দোতালা থেকে তাদের লক্ষ্য করে বন্দুকের গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০-১২ জন আহত হয়। এ সময় ক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখেন। আহত চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ, আদম আলী ও আলমগীর হোসেন মারা যায়। পরে তাদের লাশ গ্রামে ফিরিয়ে আনলে বিক্ষুব্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রাত পৌনে ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধরা জাকিরের বাড়িতে ঢুকে জাকির ও তার ভাইসহ সঙ্গে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিশ্বজিত অধিকারীর মোবাইলে রিং করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আশাশুনি থানা ছেড়ে সব পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবন রক্ষার্থে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনে আশ্রয় নিয়েছেন। থানা কমপ্লেক্স ছিল পুলিশশূন্য।

এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দুর্বৃত্তরা আসাফুর রহমান নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আসাফুর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলা বৈকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান অসলের ভাই। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আহমেদ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই আসাফুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল সকালে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ কুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুল হক ও তার দুই ছেলে শাওন এবং বাবুর বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় পিতা ও ছেলেদের মোট তিনটা বাড়ি থেকে কয়েক কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। এ ছাড়া সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সখিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেবহাটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রতনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অপরদিকে, সোমবার সন্ধ্যার আগে একটি বিজয় মিছিলের পিছন থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা সদর থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে বেশ কিছু দুর্বৃত্ত রাতে হামলা চালিয়ে থানায় অগ্নিসংযোগ করে, একই সময় কলারোয়া ও শ্যামনগর থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। রাতেই পুলিশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে থানা থেকে সবাই আশ্রয় নেয় জেলা পুলিশ লাইনে। ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় জেলাব্যাপী পুলিশের শূন্যতা দেখা দেয়।

এর আগে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় মোটরসাইকেল, জেল খানার আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সময় ৫৮৮ জন কয়েদি পালিয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা যায়। তবে গতকাল জেলা কারাগারে গিয়ে দেখা গেছে পালিয়ে যাওয়া আসামিদের অনেকে স্বইচ্ছায় জেল খানায় ফিরে এসেছে। তবে সেখানে কারাগার অরক্ষিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর